Ways To Concentrate On Salat-সালাত আদায়ে মনোযোগী হওয়ার উপায়

 

সালাত মুমিনের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। অথচ নামাজে দাঁড়ানোর সাথে সাথে অহেতুক সব চিন্তা আমাদের মাথায় এসে জট পাকিয়ে যায়।আমাদের দুনিয়ার সব হিসাব-নিকাশ শুরু হয়ে যায় নামাজে দাঁড়ালে।বিচার দিনে প্রথম বান্দার সালাতের হিসাব নেয়া হবে। তাতে হয় সে মুক্তি পাবে অথবা ধ্বংস হবে।

রসূল (ﷺ) বলেন: কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম বান্দার সালাতের হিসাব হবে। যদি সালাত ঠিক হয় তবে তার সকল আমল সঠিক বিবেচিত হবে। আর যদি সালাত বিনষ্ট হয় তবে তার সকল আমলই বিনষ্ট বিবেচিত হবে। [তিরমিযি:২৭৮]

আল্লাহ বলেন: “আর যারা তাদের সালাতে যত্নবান, তারাই জান্নাতের ওয়ারিশ-যারা ফিরদাউসের ওয়ারিশ হবে এবং তথায় তারা চিরকাল থাকবে।” [সুরা আল-মোমিন: ৯,১০,১১]
সেই নামাজ তাঁর জায়গায় এখনো আছে! তাহলে কেন আমরা নামাজ পড়ে সেরকম মজা পাই না? নামাজ উপভোগ না করার একটা বড় কারণ হচ্ছে নামাজের মধ্যে যা যা বলছি, সেগুলোর অর্থ না জানা। আমরা যদি অর্থগুলি জানি, আশা করি তাহলে আল্লাহ আমাদেরকে আমাদের নামাজগুলিকে শুদ্ধ করার তাওফিক দিবেন।
যেখানে আল্লাহর রসূল (সা:) তাঁর নামাজে এক রাকাতেই সুরাহ বাকারাহ পড়ে শেষ করে ফেলতেন, সেখানে সবচেয়ে ছোট সূরাটা পাঠ করে, কোন রাকাআতে যে আছি এটা মনে রেখে কোনমতে নামাজ শেষ করাটাই আমাদের মনের সাথে এক বিশাল যুদ্ধ! নামাজে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে রসূল (সা:) এর পা ফুলে যেত, অথচ তার জীবনের অতীত, বর্তমান সমস্ত গুনাহই মাফ! তাহলে কেন তিনি এভাবে নামাজ পড়তেন? কারণ, তিনি আসলেই তাঁর নামাজকে অনেক উপভোগ করতেন! নামাজ ছিল তাঁর জীবনের সমস্ত ঝড়-ঝাপটার মাঝে নিরাপদ আশ্রয় এবং চক্ষু শীতলতাকারী ইবাদত!
ইংশাআল্লাহ আমরাও নামাজে আল্লাহর সাথে সাক্ষাতে নিজেরা যত্নশীল ও আন্তরিক হব।
নামাজে “আল্লাহু আকবার” এর অর্থ:
নামাজ শুরু করি আমরা “আল্লাহু আকবর” বলে হাত বাঁধার মাধ্যমে। এছাড়াও নামাজের বিভিন্ন সময়ে প্রায় একটু পরে পরে আমরা বলি “আল্লাহু আকবার”. এটার সবচেয়ে কমন ট্রান্সলেশন হচ্ছে – “আল্লাহ সবচেয়ে বড়/মহান!” “Allah is the greatest.” কিন্তু, ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হচ্ছে, এটার অর্থ আসলে “Allah is greater” (Not greatest).
আরবি গ্রামার খুঁটে পড়লে দেখা যায় যে, “আল্লাহু আকবার” আসলে comparative form এ আছে, not superlative. সহজ বাংলায় আল্লাহু আকবার মানে “আল্লাহ অন্য কোনকিছুর থেকে বড়”। তাহলে প্রশ্ন দাঁড়ায়, এখানে “অন্যকিছু” টা কি? আর কেনই বা আমরা নামাজে আল্লাহকে “অন্য কোনকিছুর” থেকে বড় বলছি? এর উত্তরে রয়েছে চমৎকার এক ব্যাখ্যা!
আমরা দুই হাত বেঁধে একবার নামাজটা শুরু করার পরে, যে জিনিসের চিন্তাটাই আমাকে আল্লাহ থেকে অমনোযোগী করে অন্য দিকে নিয়ে যাচ্ছে, সেটার থেকে আল্লাহ বড়!! ইচ্ছা করেই এখানে এটা “অন্যকিছুর” ব্যাপারটা উহ্য রেখে যেন একটা শূন্যস্থান রাখা হয়েছে।
তাহলে “আল্লাহু আকবার” এর proper অর্থ দাঁড়ায় – “Allah is greater than ___________ .” এই “Fill in the blank” পূরণ করতে আমরা সেটাই বসিয়ে দিবো, যেটা আমাকে নামাজের মধ্যে আল্লাহর থেকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছে।
যেমন : নামাজ পড়তে পড়তে স্কুলের হোমওয়ার্ক বা চাকরির কথা মনে পড়লো, যেই আমি বললাম, “আল্লাহু আকবার” – তার মানে আমার এই হোমওয়ার্ক বা চাকরির থেকে আল্লাহ বড়! সিজদাহ থেকে উঠতে উঠতেই অফিসের বসের কথা মনে পড়লো – যেই বললাম – “আল্লাহু আকবার” – নিজেকে মনে করিয়ে দিলাম যে, অফিসের বসের থেকে আল্লাহ বড়। আমার দুনিয়ার যেই কাজটার কথাই আমি নামাজের মধ্যে ভেবে ভেবে আল্লাহর প্রতি অমনোযোগী হচ্ছি – সেই কাজের থেকে আল্লাহ বড়!
এজন্যেই প্রায় প্রতিটা ধাপেই আমরা “আল্লাহু আকবার” বলি, রুকুতে যেতে, সিজদায় যেতে, দুই সিজদার মাঝে, আবার সিজদা থেকে উঠতে!
এমন ভাবেই ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে যেন আল্লাহকে ভুলে যেতে গেলেও আবার “আল্লাহু আকবার” মনে করিয়ে দেয় যে, আসলে এই মুহূর্তে নামাজে দাঁড়ানো অবস্থায় আমার কাছে আল্লাহর থেকে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ আর কিছু নেই!
সানাঃ
“সুবহানাকা আল্লাহুম্মা, ওয়া বিহামদিকা, ওয়া তাবারকাসমুকা, ওয়া তাআ’লা জাদ্দুকা, ওয়ালা ইলাহা গাইরুকা”
মানে – “আল্লাহ আপনি কতই না পবিত্র, আপনার কোনো ভুল নেই. আমি সারাজীবন আপনার প্রশংসা করেই যাবো, আপনার নামগুলি সবচেয়ে বরকতপূর্ণ, আপনার নির্ধারিত হুকুম সবচেয়ে উচ্চ, আমি কখনোই আপনি ছাড়া আর কারো ইবাদাত করবো না (কাউকে আপনার থেকে বেশি গুরুত্ব দিবো না!)”
সানার ব্যাখ্যা
” সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা “
আমরা মানুষরা এই জীবনে দুইটা জিনিস চাই – Perfection and Praise. নিজেদের জন্যে আমরা চাই Perfection, নিজেদের সব ব্যাপারে আমরা আশা রাখি যে, পারফেক্টভাবে করতে পারবো – পারফেক্ট Career, পারফেক্ট বিয়ে, পারফেক্ট বাড়ি। আর অন্যের কাছে আমরা আশা করি – প্রশংসা আর appreciation. আমরা চাই আমাদেরকে অন্যেরা সমাদর করবে। মানুষের জীবনের বেশির ভাগ কষ্ট আসে এই দুই এর অভাবে। হয়, নিজেরা পারফেক্টলি কিছু করতে পারিনা, তাই নিজের উপর হতাশ। নাহলে অন্যের কাছে যেটা আশা করেছি সেটা পাইনি, তাই অন্যের উপর হতাশ!
আল্লাহ বার বার নামাজে আমাদেরকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে, Perfection and Praise belongs to Him only! ত্রুটিহীনতা এবং প্রশংসা – এই দুইটা Quality আল্লাহ রব্বুল আলামিনের আয়ত্বে। আমাদের আয়ত্বে না। যেই আমরা নামাজে দাঁড়িয়ে বলছি, “সুবহানাকা আল্লাহুম্মা (আল্লাহ তুমি কত পবিত্র, ত্রুটিহীন), ওয়া বিহামদিকা (এবং আমি তোমার প্রশংসা সারাজীবন করেই যাবো) – সাথে সাথে আমরা আল্লাহর সামনে নিজেদের imperfect nature কবুল করে নিচ্ছি এবং অন্য কারো attention না খুঁজে একমাত্র আল্লাহর দিকে ফোকাস করছি।
নামাজে দাঁড়িয়েই এটা একজন মুসলিম জানে যে, তার হতাশ হবার কিছু নেই, পারফেকশানের মালিক আল্লাহ। সে নিজে না. আল্লাহ তাকে তার perfection এর জন্যে বিচার করবেন না, বরং তার আন্তরিক চেষ্টার জন্যে পুরষ্কৃত করবেন। অন্য কারো কাছে প্রশংসা বা উপযুক্ত সমাদর না পেলে তার কষ্টের কিছু নেই; সত্যিকার প্রশংসা আল্লাহর জন্যে, মানুষের নিজের জন্যে না এবং আল্লাহ তার বান্দাকে সবচেয়ে বেশি appreciate করেন। অন্য কেউ এই মুহূর্তে না করলেও কষ্ট নেই।
” ওয়া তাবারকাসমুকা “
“আল্লাহ তোমার নামগুলি কতই না বরকতপূর্ণ!” এখানে, আরবি “বারাকাহ” শব্দটার সহজ অনুবাদ ইংরেজিতে “Blessing”, বাংলায় আশীর্বাদ। কেউ দোয়া চাইলে আমরা বলি, “May Allah Bless you”, মানে আল্লাহ তোমাকে বরকত দিক. বরকত বলতে আমরা বুঝি কল্যাণ, মঙ্গল – জীবনে যা কিছু ভালো। “বারাকাহ”-র আরেকটা অর্থ আমরা অনেকেই জানি না. বারাকাহ মানে হচ্ছে, যখন আল্লাহ আমাদের কল্যাণ এমনভাবে বাড়িয়ে দেন যে, আমরা অনেক কম সময়ে অনেক বেশি কিছু অর্জন করে ফেলতে পারি।
যখন আল্লাহ বারাকাহ দেন, তখন সেটা এমনভাবে প্রশস্ত হয়ে যায় যে, কম সময়ে অনেক বেশি কল্যাণ অর্জন করা সম্ভব হয়, যেটা আল্লাহর বারাকাহ ছাড়া অসম্ভব! নামাজ এমন একটা ইবাদাত, যেটা করতে খুব কম সময় লাগে, কিন্তু যদি ঠিকভাবে করতে পারা যায়, তাহলে সেটা আমাদের জন্যে অসম্ভব রকমের কল্যাণ এবং বরকত নিয়ে আসে! নামাজের শুরুতেই যখন আমরা বলছি যে, “ওয়া তাবারকাসমুকা” – “আল্লাহর নামগুলি বরকতপূর্ণ” – তার মানে, এরকমের অসম্ভব কল্যাণ আল্লাহ ছাড়া আসা সম্ভব নয় – এটাই আমরা মেনে নিচ্ছি। সুবহানাল্লাহ!
” ওয়া তা আ’লা জাদ্দুকা “
“জাদ্দুকা” মানে “Determination, Decree”, বাংলায় “ইচ্ছাশক্তি, আইন পাশ করে দেওয়া”. “আ’লা” মানে” Higher, উঁচু, মহান। অর্থ দাঁড়ায় – আল্লাহর ইচ্ছা সবচেয়ে বড়! আমাদের কত ইচ্ছা থাকে, কিন্তু সবসময় আমাদের ইচ্ছামতন সবকিছু হয়না। নামাজে যখন পাঁচবার করে আমরা বলি – “আল্লাহ, আমার ইচ্ছার থেকে আপনার ইচ্ছা বড়!” এটা আমাদেরকে নিজেদের limitation মেনে নিয়ে আল্লাহর Wisdom কে Trust করতে শেখায়! মনে শান্তি দেয়.
” ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা “
“আল্লাহ, আমি আপনি ছাড়া আর কারো ইবাদাত করবো না” – এই পর্যায়ে নামাজে আমরা স্বীকার করি যে, আল্লাহ আমাদের প্রভু। আমরা তাঁর গোলাম। আমরা আল্লাহর ছাড়া আর কারো সামনে মাথা নত করবো না, আমরা আল্লাহর থেকে বেশি আর কাউকে গুরুত্ব দিবো না।
 সুবহানাল্লাহ! আচ্ছা, একটু ভাবি, দিনের মধ্যে পাঁচবার করে যদি আমরা কাউকে বলি যে, “তুমি আমার লাইফে সবচেয়ে ইম্পরট্যান্ট” এবং বলার সাথে সাথেই যদি এমন কিছু করি যেটা আমাদের কথার পুরো বিপরীত। তাহলে ওই ইম্পরট্যান্ট মানুষ আমাদের নিয়ে কি ভাববে? এই কাজ তো আমরা আল্লাহর সাথে দৈনিক করে আসছি। এজন্যেই যে বুঝে নামাজ পড়ে, তার কাছে ব্যাপারটা অন্যরকম।
তারা আসলেই কুরআনের এই আয়াতকে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন,
“নিশ্চয়ই নামাজ অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে!” (সূরা আনকাবুত – ২৯:৪৫).
আমরা এটা পড়ি আর আমাদের মনে হয় – “কই! নামাজ পড়েও তো খারাপ কাজ করেই যাচ্ছে!” এটা আমাদের নিজেদের দুর্বলতা, নামাজের না।
সূরাহ ফাতিহা
 ১. আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আ’লামিন।
 আল্লাহ এই আয়াতের মাধ্যমে আমাদের সাথে আল্লাহর পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। তিনি আমাদের রব, প্রভু, মনিব। আরবি “রব” শব্দটার মানে এমন কেউ যে টুয়েন্টি-ফোর-সেভেন আমাদের দেখ-ভাল করে যাচ্ছেন। সারাটাক্ষণ আমাদের খেয়াল রাখছেন। আমাদের প্রত্যেকটা হার্ট-বিট সুপারভাইজ করে যাচ্ছেন। আমাদেরকে খাওয়াচ্ছেন, পড়াচ্ছেন। নানারকমের রোগ-বালাই থেকে আমাদেরকে সুস্থ রাখছেন। আমাদের অনুরোধ শুনছেন। আমাদেরকে সবার চেয়ে বেশি ভালোবেসে যাচ্ছেন – এই সবই “রব” শব্দটার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।
আল্লাহ আমাদের প্রভু মানে আমরা তাঁর গোলাম। আমরা আল্লাহর সম্পত্তি। আমাদের হাত-পা-মুখ সবকিছুই আল্লাহর। খুব সীমিত সময়ের জন্যে আল্লাহ আমাদেরকে আমানত হিসেবে কিছু জিনিসের কন্ট্রোল দিয়েছেন। কিয়ামতের দিন আমাদের হাত -পায়ের উপর আমাদের কোনো কন্ট্রোল থাকবে না, আমাদের নিজেদের হাতগুলি আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী দিবে। নিজেদের শরীরের উপরেই যেখানে আমাদের চূড়ান্তভাবে কোনো কন্ট্রোল নেই, সেখানে আমরা খুশি খুশি এই আয়াতের মাধ্যমে নিজেদের দাসত্ব আল্লাহর কাছে স্বীকার করি।
নিজেকে গোলাম ভাবতে অনেকের কাছে ভালো নাও লাগতে পারে। কারণ মানুষ স্বভাবতই স্বাধীন থাকতে পছন্দ করে। তাছাড়া, প্রভু এবং গোলামের সম্পর্কে যেটা সাধারণত দেখা যায় যে, এক পর্যায়ে গিয়ে প্রভু তার দাসের উপর ক্ষমতার জোর খাটানো শুরু করে এবং সেটা অত্যাচারের পর্যায়ে নিয়ে যায়। কিন্তু, আল্লাহ এখানে বলছেন যে, তিনি অন্যরকমের প্রভু। তিনি এমন প্রভু যে তাঁর গোলামের সাথে কখনো অন্যায় করেন না। তিনি তার বান্দাকে ধরে-বেঁধে রাখেন না, বরং বান্দাদেরকে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত স্বাধীন ইচ্ছা (free will) দেন। এই স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি কে কিভাবে কাজে লাগিয়ে হিদায়াতের পথে থাকতে হবে সেটার কমপ্লিট ইন্সট্রাকশন দিয়েছেন। আমরা দাসেরা তাই আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতায় তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করতে থাকি।
তিনি এমন একজন রব, যার জন্যে সমস্ত প্রশংসা নির্ধারিত! আরবি “হামদ” শব্দটা প্রশংসা এবং কৃতজ্ঞতা দুইটাই ইঙ্গিত করে। কারণ, কেউ যখন মন থেকে প্রশংসা করে কাউকে ধন্যবাদ দেয়, তার কৃতজ্ঞতা হয় নির্ভেজাল। আমরা সূরা ফাতিহাতে নির্ভেজাল ভাবে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। এখানে আরেকটা উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, এই আয়াতের বিশ্লেষণে বুঝা যায়, সর্বক্ষণ কেউ না কেউ আল্লাহর প্রশংসা করে যাচ্ছে। গাছ-গাছালি, পাখি, ফেরেশতা ইত্যাদি – তারা সবাই আল্লাহর গুণগান করতে ব্যস্ত! এটার তাৎপর্য হচ্ছে, আমাদের প্রশংসার আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। দুনিয়ার সব মানুষ মিলে আল্লাহর প্রশংসা ছেড়ে দিলেও আল্লাহর রাজ্য থেকে একটা কিছু কমে যাবে না। আবার দুনিয়ার সমস্ত মানুষ মিলে আল্লাহর প্রশংসা করতে ঝাঁপিয়ে পড়লেও সেটার ফলে আল্লাহর মহিমা এতটুকু বেড়ে যাবে না।
আমরা “আলহামদুলিল্লাহ” বলি বা না বলি, আল্লাহ সবসময় প্রশংসিত! আমাদের “আলহামদুলিল্লাহ” বলাতে আল্লাহর কোনো লাভ নেই। বরং লাভটা আমাদের। সবসময় হয়তো বুঝতে পারিনা, আমরা যতবার নামাজে এই আয়াত পড়ছি, ততবার আমরা নতুন করে পজিটিভ হতে শিখছি। শত কষ্টের মধ্যে থেকেও “আলহামদুলিল্লাহ” বলতে পারার চেয়ে পাওয়ারফুল আর কিছু নেই। দিনের মধ্যে পাঁচবার করে নামাজে আমরা সেটারই প্র্যাক্টিস করছি।
“আ’লামিন” মানে ”সকল সৃষ্টি জগতের (পালনকর্তা)”. মানে, আল্লাহ তা’য়ালা জাতি, ধর্ম, বর্ণ – নির্বিশেষে সবার জন্যে সমানভাবে অনুগ্রহশিল। আল্লাহ সবার জন্যে নিজের অনুগ্রহ বিলিয়ে দিচ্ছেন! তিনি যে “রাব্বুল আলামিন”!
এক লাইনে এই আয়াতের অনুবাদ হয় – “যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর, যিনি সকল সৃষ্টি জগতের পালনকর্তা।” কিন্তু একটু সময় নিয়ে ব্যাখ্যাসহ বুঝে পড়লে, প্রতিটা শব্দ অন্তরের ভিতরে গিয়ে নাড়া দেয়!
“আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামিন” আমাদেরকে প্রতিবার মনেকরিয়ে দিচ্ছে যে, আমার এমন একজন সীমাহীন প্রশংসার যোগ্য রব আছে যিনি সারাক্ষন আমার যত্ন নিতে ব্যস্ত, আমার যত ঝামেলা-কষ্ট – সবকিছু তিনি সমাধান করে দিতে পারেন এবং তিনি আমাদের কারো মধ্যে ভেদাভেদ করেন না।
 ২. আর-রহমানির রহিম।
আল্লাহ কেন তাঁর দয়ার কথা বলতে গিয়ে “রহমান” শব্দটা ব্যবহার করলেন? এর একটা চমৎকার কারণ আছে। আরবিতে “মায়ের গর্ভ” এবং “রহমান” – এই দুইটা শব্দ একই রুট ওয়ার্ড (root word) থেকে এসেছে। আরবিতে একই রুট ওয়ার্ড বা, মূলশব্দ থেকে যে শব্দগুলোর উৎপত্তি হয়, তাদের মধ্যে অদ্ভুত একটা সম্পর্ক থাকে। তাহলে “মায়ের গর্ভ” এবং “আর-রহমান” এর মধ্যে সম্পর্ক কী?
একজন মা নয়মাস ধরে একটা বাচ্চাকে পেটে ধরে। শতকষ্টের মধ্যেও সবসময় খেয়াল রাখে। আল্লাহ আমাদেরকে এই মায়ের থেকেও বেশি ভালোবাসেন। আল্লাহ হচ্ছেন রহমানুর রাহিম।
“মায়ের গর্ভ” এবং “রহমান” এর মধ্যে সম্পর্কটা মাইন্ড ব্লোয়িং! বাচ্চা যখন মায়ের গর্ভে থাকে, সে কিন্তু তার মাকে দেখতে পারেনা। মা যে কিভাবে তার জন্যে পা টিপে টিপে হাঁটছে, একটু পর পর বমি করছে, বাচ্চার জন্যে দুয়া করছে, বাচ্চা নেক হবার জন্যে দিনরাত কুরআন তিলাওয়াত করছে – অবুঝ বাচ্চা কিন্তু সেটা দেখতে পারে না! ঠিক একই ভাবে আমরা আল্লাহকে দেখতে পারি না। আল্লাহ যে কিভাবে দিনের পর দিন আমাদের খেয়াল রেখে যাচ্ছেন, আমাদের যাবতীয় চাহিদা পূরণ করে যাচ্ছেন – সে ব্যাপার নিয়ে আমাদের তেমন চিন্তা নেই! ছোট্ট বাচ্চাটা যেমন তার মায়ের গর্ভে পরম মমতায় মোড়ানো, ঠিক সেইভাবে আমরা চারপাশ থেকে আল্লাহর রহমত আর দয়া দিয়ে পরিবেষ্টিত!
ছোট বাচ্চা মাকে জ্বালিয়ে মাথা নষ্ট করে দেওয়ার পরেও যেমন বাচ্চাকে ছাড়া মায়ের চলে না. তেমনি আমরা মিনিটে আল্লাহর অবাধ্য হবার পরও আল্লাহ আমাদেরকে ছেড়ে দেন না! ইনি হলেন “আর রহমানির রহিম”!
৩. মালিকি ইয়াও মিদ্দীন।
আগের দুই আয়াতে আল্লাহর এমন মহানুভবতা এবং ভালোবাসার কথা শুনে বান্দা ভাবতে পারে – সুবহানাল্লাহ! আমার রবের এতো দয়া! তাহলে আমি যতই গুণাহ করি না কেন, তিনি তো শেষমেশ আমাকে ক্ষমাই করে দিবেন। এই ধরণের ভাবভঙ্গি থেকে মানুষ যেন আল্লাহর দয়াকে সহজলভ্য ভেবে পাপে না জড়িয়ে যায়, এজন্যে পরের আয়াতেই আল্লাহ বলছেন যে, তিনি হলেন “মালিকি ইয়াও মিদ্দীন” – তিনি কিয়ামত দিবসের মালিক! এমন এক দিনের মালিক আল্লাহ, যেদিন প্রতিটা কাজের পাই পাই হিসাব নেওয়া হবে. আল্লাহ তার দয়াতে যেমন অতুলনীয়, তেমনি তার ন্যায়বিচারও অকাট্য! তিনি মায়ের থেকেও আমাদের বেশি ভালোবাসেন দেখে আমরা যা ইচ্ছা তাই করে পাড় পেয়ে যাবো – সেটা হবে না!
৪. ইয়্যা কানা’বুদু ওয়া ইয়্যা কানাস তাঈ’ন।
অর্থঃ ‘আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি।”
প্রথম তিন আয়াতে আল্লাহর পরিচয় এভাবে পাওয়ার পর আমরা বান্দারা আল্লার কাছে নিজেদের পুরোপুরি সাবমিট করে দেই এই আয়াতের মাধ্যমে! যে আল্লাহ আমার রব, রহমানুর রহিম, মালিকিয়াও মিদ্দীন, আমি কিভাবে তার ইবাদাত না করে থাকতে পারি? আয়াতের প্রথম অংশে ইবাদাত করার এবং পরের অংশে সাহায্য চাওয়ার কথা বলা হয়েছে, কারণ আমরা আল্লাহর সাহায্য ছাড়া তাঁর ইবাদাতটুকুও করতে পারবো না. আরবিতে অনেক শব্দই আছে যেটার মানে সাহায্য। কিন্তু এই আয়াতে “সাহায্য” বুঝাতে আল্লাহ বাছাই করেছেন আরবি শব্দ “ইস্তিয়ানা”।
“ইস্তিয়ানা”র বিশেষত্ব হচ্ছে, যেই ব্যক্তি সাহায্য চাচ্ছেন, সে নিজে অলরেডি নিজেকে সাহায্য করার জন্যে সবরকমের কাজ করে যাচ্ছে। তারপর সে যদি হেল্প চায় – সেটা হবে “ইস্তিয়ানা” বা “নাস্তাঈন”। আল্লাহর সাহায্য সস্তা না! আমরা নিজেরা কোনোরকমের চেষ্টা না করেই যদি খালি আল্লাহর কাছে “দাও! দাও!” করি, তাহলে হবেনা। আল্লাহর দিকে এক স্টেপ এগিয়ে আসলে আল্লাহ তা’য়ালা বান্দার দিকে দশ স্টেপ এগিয়ে আসবেন। কিন্তু অন্ততপক্ষে প্রথম স্টেপটা বান্দাকে নিতে হবে।
৫. ইহদিনাস সিরত্বল মুস্তাকিম।
আমাদেরকে সরল পথ দেখাও। আমরা তো আগের আয়াতে বলে ফেললাম যে “আল্লাহ শুধু তোমারই ইবাদাত করি”. কিন্তু, এই ইবাদাতটা আমরা কিভাবে করবো? কি করলে সত্যিকার অর্থে আমাদের দ্বীন, দুনিয়া, আখিরাতের কল্যাণ হবে? তাই এই আয়াতে আমরা আল্লাহর কাছে আন্তরিকভাবে দিক-নির্দেশনা চাচ্ছি। “সীরত্বল মুস্তাকিমের” পথ চাচ্ছি। “সীরাত” মানে যেই পথটা সরল, সহজ এবং ক্লিয়ার! একটা রাস্তা যখন পুরোপুরি স্ট্রেইট হয়, তখন অনেক দূর থেকেও সেই রাস্তার শেষ মাথায় গন্তব্য ক্লিয়ারলি দেখা যায়. মুসলিমরাও তাদের গন্তব্য এবং জীবনে চলার পথের পারপাস নিয়ে ক্লিয়ার – তারা চায় আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং জান্নাত
৬. সিরাত্বল্লাযীনা আন আমতা আলাইহিম গইরিল মাগদুবি আলাইহিম ওয়ালাদ দল্লীন! আমিন।
“সে সমস্ত লোকের পথ, যাদেরকে তুমি নেয়ামত দান করেছ। তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি তোমার গজব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।”
এর আগের আয়াতে আমরা আল্লাহর কাছে ইন্সট্রাকশন চেয়েছি, এই আয়াতে আমরা চাচ্ছি জলজ্যান্ত রোল মডেল! ”সে সমস্ত লোকের পথ, যাদেরকে তুমি নেয়ামত দান করেছ” – এরা হচ্ছেন নবী-রসূল (সা:). তাঁরা যেই উদাহরণ সেট করে গিয়েছেন আমাদের জন্যে – আমরা সেটা ফলো করতে পারলে দুনিয়া-আখিরাতে কল্যাণ পাবো!
আমরা তাদের পথ চাই না “যাদের উপর আল্লাহর গজব নাযিল হয়েছে” – এরা হচ্ছে সেসমস্ত লোক, যাদেরকে আল্লাহ সঠিক জ্ঞান দিয়েছেন, তার পরও তারা আল্লাহকে মানেনি। জেনে বুঝেও ইসলামকে পালন করেনি। তাদের জ্ঞান ছিল, কিন্তু কোনো সৎকর্ম ছিলোনা।
অপরদিকে “ওয়ালাদ্দল্লীন” হলো যারা পথভ্রষ্ট – তারা সেসমস্ত লোক যাদের হয়তো ভালো ভালো কর্ম আছে, কিন্তু তারা সেটা আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্যে করেনা। নিজের জন্যে বা দুনিয়ার উদ্দেশ্য হাসিলের জন্যে করে – তাই তারা পথভ্রষ্ট! আমরা এই আয়াতে আল্লাহর কাছে ঈমানহীন কর্ম এবং কর্মহীন ঈমানের কাছ থেকে আশ্রয় চাই! এই দুইটাই আমাদের দুনিয়া-আখিরাত ধবংস করে দিতে যথেষ্ট!
রুকু এবং সিজদাঃ
রুকু এবং সিজদায় করা দুয়াগুলির বিশেষত্ব অনেক। আমরা রুকুতে বলি
“সুবহানা রব্বিয়াল আযীম”.
অর্থঃ “আল্লাহ আপনি কতই না পবিত্র এবং আপনি সবচেয়ে শক্তিধর।”
আমরা সিজদায় বলি,
“সুবহানা রব্বিয়াল আ’লা”
অর্থঃ ”আল্লাহ আপনি কতই না পবিত্র এবং আপনার মাকাম সবচেয়ে উঁচু।”
নামাজের মধ্যে সবচেয়ে নড়বড়ে অবস্থাটা হচ্ছে “রুকু”। রুকুরত অবস্থায় কেউ যদি নামাজীকে হালকা করেও একটা ধাক্কা দেয়, সে ধপাস করে মাটিতে পড়ে যাবে। চমৎকার ব্যাপারটা হচ্ছে, আমরা যখন নামাজে সবচেয়ে দুর্বল অবস্থায় থাকি, তখন বলি “আল্লাহ আপনি সবচেয়ে শক্তিশালী!” আবার, আমরা যখন নামাজের মধ্যে সবচেয়ে নিচু অবস্থানে থাকি, তখন আল্লাহকে বলি যে, “আল্লাহ আপনি সবচেয়ে উঁচু!” নামাজ পড়তে পড়তে যেখানেই মন চলে যাক না কেন, রুকু আর সিজদাহ দেওয়ার সময় মনে পড়ে যায় যে, “আল্লাহ সবচেয়ে শক্তিধর এবং আল্লাহ সর্বোচ্চ!”
তারপর রুকু থেকে উঠতে উঠতে আমরা বলি –
“সামি আল্লহু লিমান হামিদা”
অর্থঃ “আল্লাহ সেই ব্যক্তির কথা শোনেন, যে তার প্রশংসা করে।” তার পরেই দাঁড়িয়ে সোজা হয়ে আমরা আল্লাহর প্রশংসা করি – “রব্বানা ওয়া লাকাল হামদ’
অর্থঃ হে আল্লাহ! যাবতীয় প্রশংসা কেবল তোমারই। যেন আমাদের কথাগুলি যে আল্লাহ সুবহানাতা’আলা শুনবেন, সেটা নিশ্চিত করে রাখলাম। ঠিক সিজদায় যাবার আগে কেন এটা নিশ্চিন্ত করে নিলাম যে, আল্লাহ আমার সব কথা শুনবেন?
কারণ, সিজদায় বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে কাছে চলে যায় এবং সিজদা হচ্ছে দুয়া কবুলের মোক্ষম সময়।
রসূল (সা.) বলেছেন,
‘সিজদারত বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে নিকটবর্তী। সুতরাং সে সময় তোমরা বেশি বেশি দুয়া করো।’ (মুসলিম, হাদিস : ৪৮২)।
তাই আল্লাহর সাথে বান্দার এই মহামিলনের ঠিক আগ মুহূর্তে “সামি আল্লাহু লিমান হামিদা” মনেকরিয়ে দিচ্ছে যে, আল্লাহর কাছে যা চাওয়ার সিজদায় গিয়ে উজাড় করে চেয়ে নাও। তিনি তোমার সব আকুতি-মিনতি শুনছেন। প্রতিটা দুয়া রব্বুল আলামিনের দরবারে মেহমান হয়ে পৌঁছাবে।
তাশাহুদঃ
‘আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস্ সালাওয়াতু, ওয়াত্ তইয়িবাতু” – “সকল অভিবাদন ও সম্মান আল্লাহর জন্য, সকল সালাত আল্লাহর জন্য এবং সকল ভাল কথা ও কর্মও আল্লাহর জন্য।”
আমরা একজন আরেকজনকে অভিবাদন জানাই সালাম দেওয়ার মাধ্যমে। কিন্তু আল্লাহকে আমরা “আসসালামুয়ালাইকুম” বলতে পারি না। কারণ, আল্লাহ নিজেই “সালাম”, তিনি সকল শান্তির মালিক। তাকে আমরা বলতে পারিনা, “আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক!” সেজন্য তাশাহুদের প্রথম অংশ উৎসর্গ করা হয়েছে আল্লাহকে রাজকীয়ভাবে অভিবাদন করে।
ইমাম শাফিঈ (রহঃ) বলেন, আপনি যখন কোনো রাজার প্রাসাদে প্রবেশ করবেন, অন্যান্য দশজনকে যেভাবে সম্বোধন করেন, সেভাবে কিন্তু রাজাকে ডাকবেন না.” আল্লাহ সুবহানাতা’য়ালা হচ্ছেন রাজাদের রাজা! “‘আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি …” হচ্ছে সবচেয়ে উঁচু রাজার জন্যে সম্ভাষণ! সকল অভিবাদন, সম্মান, ভালো কথা ও কাজ কেবল মাত্র আল্লাহরই জন্যে!
“আসসালামু আলাইকা আইয়্যুহান নাবীয়্যু ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু” – ”হে নবী! আপনার প্রতি শান্তি, আল্লাহর রহমত ও তাঁর বরকত বর্ষিত হোক।”
এখানে আমরা প্রিয় রসূল (সা:) এর কাছে আমাদের সালাম ও দুয়া দিচ্ছি। আমাদের দুয়ার কিন্তু আল্লাহর রসূল (সা:) এর কোনো দরকার নেই। তিনি আমাদের ধরা ছোঁয়ার বাইরে এক মাকামে পৌঁছে গেছেন। রসূল (সা:) এর উপর দরূদ পাঠ করলে লাভটা আমাদেরই হয়। কারণ আমরা একবার রসূল (সা:) কে সালাম দিলে, আল্লাহ আমাদের জন্যে দশবার সালাম পাঠান! সুবহানাল্লাহ!!! স্বয়ং আল্লাহর পক্ষ থেকে সালাম আসাটা একবার ভেবে দেখেছেন?
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পাঠ করবে, তার বিনিময়ে আল্লাহ্ তার উপর দশবার দরুদ পাঠ করবেন। [সহীহ সুনান নাসাঈ হাদিস -১২৯৭]
তাশাহুদের প্রথম লাইনের মাধ্যমে আমরা আল্লাহকে সাদরে সম্ভাষণ জানালাম এবং দ্বিতীয় লাইনের মাধ্যমে আল্লাহ যেন আমাদেরকে সেই সম্ভাষণের উত্তর দিলেন আমাদের দরূদ পাঠের মাধ্যমে।
“আসসালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস্ সালিহীন।” – “আমাদের উপরে এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের উপরে শান্তি বর্ষিত হোক।”
এবার আমরা দুয়া করছি নিজেদের জন্যে এবং পরে আল্লাহর বাকি সমস্ত নেক বান্দাদের জন্যে। এখানে আল্লাহ আমাদের শিখাচ্ছেন যেন দুয়া করার সময় আমরা শুধু নিজের জন্যে না চেয়ে সবার জন্যে চাই।
“আশহাদু আল-লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশ্হাদু আননা মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রসুলুহু।” – আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মাদ আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসূল।”
তাশাহুদের শেষে এসে আমরা আবারো আল্লাহর সামনে নিজেদের দাসত্ব স্বীকার করছি। যদি এমন হয়ে থাকে যে, আল্লাহর ছাড়া অন্য কাউকে খুশি করার জন্যে এতক্ষন নামাজ পড়েছি, জীবন গড়ছি স্রেফ নিজেকে নাহলে অন্য কাউকে খুশি করতে, তাহলে এখানে এসে এটা আবার মনে করিয়ে দিলো যে, আল্লাহ ছাড়া আর কারো সামনে মাথা নত করবোনা।
২য় লাইনে আমরা রসূল (সা:) এর উঁচু মাকাম সম্পর্কে ধারণা পাই! কিন্তু এই অভাবনীয় চমৎকার মানুষটিও সবার আগে নিজেকে আল্লাহর দাস বলে স্বীকার করেন। এবং আমরাও তারই সাক্ষ্য দেই। যেই মানুষটাকে আল্লাহ নির্বাচন করেছেন আল্লাহর নবী হতে, যে আল্লাহর সাথে লিটারেলি দেখা করে এসেছেন সাত আসমানের উপর থেকে – তারও আল্লাহর সামনে কোনো ক্ষমতা নেই। সেখানে আমি আর আপনি? সুবহানাল্লাহ!
দরূদ শরীফঃ
“আল্লাহুম্মা সল্লি আলা মুহাম্মাদিও। ওয়ালা আলি মুহাম্মাদিন। কামা সাল্লাইতা আলা ইব্রাহীমা ওয়ালা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিও ওয়ালা আলি মুহাম্মাদিন। কামা বারাকতা আলা ইব্রাহীমা ওয়ালা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।”
অর্থঃ “হে আল্লাহ! আপনি নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও উনার বংশধরদের উপর রহমত বর্ষণ করুন, যেরূপভাবে আপনি ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ও তার বংশধরদের উপর রহমত বর্ষণ করেছিলেন। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত।”
‘নবী (সাঃ) এর প্রতি দরূদ পড়ার নির্দেশ আল্লাহতা’য়ালা নিজেই দিয়েছেন। নবীর প্রতি দরূদ পড়া আল্লাহর আদেশের বাস্তবায়ন করা।
সূরা আহযাবের ৫৬ আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তার ফেরেশতারা নবীর প্রতি সালাত-দরূদ পেশ করেন। হে মুমিনগণ! তোমরাও তার প্রতি সালাত পেশ করো এবং তাকে যথাযথভাবে সালাম জানাও।’
আবদুল্লাহ ইবনে আমর আস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরূদ পাঠ করবে, আল্লাহ তার ওপর দশবার দরূদ পাঠ করবেন।’ – (সহিহ মুসলিমঃ ৩৮৪)
আলী (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘প্রকৃত কৃপণ সেই ব্যক্তি, যার কাছে আমি উল্লিখিত হলাম (আমার নাম উচ্চারিত হল), অথচ সে আমার প্রতি দরূদ পাঠ করল না।’ – (সুনানে তিরমিজিঃ ৩৫৪৬)
রসূল (সাঃ) এর নাম শোনার পর তার উপর দরূদ না পড়াটা মারাত্মক! প্রায় সময়েই আমরা খুব নর্মালভাবে মুহাম্মদ (সাঃ) এর নাম উল্লেখ করি, বা শুনি যে অন্য কেউ উল্লেখ করছে, কিন্তু বলার বা শোনার সাথে সাথে “সাল্লাল্লাহু ওয়া আলাইহি ওয়া সাল্লাম” বলিনা। মাত্র ২ সেকেন্ড লাগে বলতে, কিন্তু প্রায় সময়েই খেয়াল থাকেনা। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) নাম শুনে যে ব্যক্তি দরূদ পড়ে না তার জন্য জিবরাইল (আলাইহিস সালাম) বদদোয়া করেছেন আর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমীন বলেছেন।
কাব ইবনে উজরা (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন, “তোমরা মিম্বরের কাছে একত্রিত হও। আমরা উপস্থিত হলাম। যখন তিনি মিম্বরের প্রথম স্তরে চড়লেন তখন বললেন, হে আল্লাহ কবুল করুন। তারপর যখন দ্বিতীয় স্তরে চড়লেন তখনও বললেন, হে আল্লাহ কবুল করুন। তারপর তৃতীয় স্তরে চড়ে আবারও বললেন, হে আল্লাহ কবুল করুন।
খুতবা শেষে যখন মিম্বর থেকে অবতরণ করলেন, তখন আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আজ আমরা আপনার থেকে এমন কিছু শুনলাম যা এর পূর্বে আর কখনও শুনিনি। তখন তিনি বললেন,
আমার কাছে জিবরাইল (আ.) এসে বলল, যে ব্যক্তি রমজান পেয়েও তাকে ক্ষমা করা হলো না – সে বঞ্চিত হোক। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহ কবুল করুন।
যখন দ্বিতীয় স্তরে চড়লাম তখন তিনি বললেন, যার কাছে আপনার নাম উল্লেখ করা হলো কিন্তু সে আপনার ওপর দরূদ পড়ল না – সেও বঞ্চিত হোক। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহ কবুল করুন।
যখন তৃতীয় স্তরে চড়লাম, তখন তিনি বললেন, যে পিতা-মাতাকে অথবা তাদের কোনো একজনকে বৃদ্ধাবস্থায় পেয়েও তারা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারল না সেও বঞ্চিত হোক। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহ কবুল করুন।” – (বায়হাকিঃ ১৪৬৮)
দোয়া-মাসুরাঃ
আবু বকর (রাঃ) একবার রাসূল (সাঃ) কে অনুরোধ করলেন, “ইয়া আল্লাহর রসূল (সাঃ)! আমাকে এমন একটা দুয়া শিখিয়ে দেন, যেটা পড়ে আমি নামাজে আল্লাহকে ডাকতে পারবো।” তখন রসূল (সাঃ) তাকে শিখিয়ে দিলেন এই দুয়াটা,
“আল্লাহুম্মা ইন্নি জলামতু নাফসি যুলমান কাছিরা, ওয়ালা ইয়াগ ফিরূজ যুনুবা ইল্লা আন্তা ফাগফিরলি মাগফিরাতাম মিন ইনদিকা ওয়ার হামনি ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহিম” (সহীহ বুখারী)
.
অর্থঃ “হে আল্লাহ! আমি আমার নিজের আত্মার উপর অত্যাধিক অত্যাচার করেছি এবং তুমি ছাড়া পাপ ক্ষমা করার কেউ নেই । সুতরাং তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমার প্রতি রহম কর । নিশ্চই তুমি অত্যন্ত ক্ষমাশীল দয়ালু।”
“যুলুম করা” মানে আমরা সাধারণত বুঝি যে কোনো অত্যাচারী ক্ষমতাসীন ব্যক্তি দুর্বল শ্রেণীর কারো সাথে অবিচার করছে। এরকম অত্যাচার করা সবাই ঘৃণার চোখে দেখে। কিন্তু ইন্টারেস্টিংলি আমরা নিজেরাই নিজেদের উপর সবচেয়ে বড় অত্যাচারটা করি যখন আমরা আমাদের আত্মাকে আল্লাহ থেকে বঞ্চিত করি। আত্মা আল্লাহর স্মরণ ছাড়া কখনোই শান্তি পাবে না. আল্লাহকে ভুলে গিয়ে নিজেদের আত্মাকে আমরা অস্থির রাখি। যতবার আমরা পাপ করি আমরা আমাদের নিজেদের উপর অত্যাচার করি। আল্লাহর আদেশ অমান্য করার মাধ্যমে আত্মার উপর যুলুম করি! নামাজের এই পর্যায়ে এসে আমরা নিজেদেরকে এই ভুল স্বীকার করে নিচ্ছি এবং জালিমে পরিণত হওয়া থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি।
আমরা যখন জালিম হয়ে যাই, তখন আল্লাহ ছাড়া আমাদেরকে রক্ষা করার আর কেউ নেই! তাই আল্লাহর কাছেই “মাগফিরাহ” এবং “রাহমাহ” চাই!
“মাগফিরাহ” এর তাৎপর্য হলো, যত বড় গুনাহ-ই বান্দা করুক না কেন, আল্লাহ মাফ করতে সক্ষম!
আর “ওয়ারহামনি” এর তাৎপর্য হলো, যতবারই বান্দা গুনাহ করুক না কেন, আল্লাহ মাফ করতে সক্ষম! সুবহানাল্লাহ!
একই ভুল কেউ দুইবার করছে দেখলেই আমাদের মানুষদের মাথা খারাপ হয়ে যায়, আমরা ধৈর্য হারিয়ে ফেলি! ছোট ছোট ভুল আমরা কোনোমতে মাফ করতে পারলেও কেউ বড় রকমের কোনো অন্যায় করলে আমরা কিছুতেই মাফ করতে পারিনা। কিন্তু আল্লাহ পারেন।
দোয়া-কুনূতঃ
“আল্লাহুম্মা ইন্না নাস্তায়ীনুকা, ওয়া নাস্তাগ্ফিরুকা, ওয়া নু’মিন বিকা, ওয়া নাতাওয়াক্কালু ‘আলাইকা, ওয়া নুছনী আলাইকাল খাইর, ওয়া নাশ কুরুকা, ওয়ালা নাকফুরুকা, ওয়া নাখলাউ, ওয়া নাতরুকু মাঁই ইয়াফজুরুকা আল্লাহুম্মা ইয়্যাকা না’বুদু ওয়া লাকানুসল্লী, ওয়া নাসজুদু, ওয়া ইলাইকা নাস’আ, ওয়া নাহফিদু, ওয়া নারজু রাহমাতাকা, ওয়া নাখশা আযাবাকা, ইন্না আযাবাকা বিল কুফ্ফারি মুলহিক।”
অর্থঃ হে আল্লাহ আমরা তোমারই সাহায্য চাই, তোমারই নিকট ক্ষমা চাই, তোমারই প্রতি ঈমান রাখি, তোমারই ওপর ভরসা করি এবং সকল, মঙ্গল তোমারই দিকে ন্যস্ত করি। আমরা তোমার কৃতজ্ঞ হয়ে চলি অকৃতজ্ঞ হই না. যারা তোমাকে অমান্য করে তাদের সাথে আমরা সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করি ও তাদের ত্যাগ করি। হে আল্লাহ আমরা তোমারই দাসত্ব করি তোমারই জন্য নামায পড়ি এবং তোমাকেই সিজদাহ করি, আমরা তোমারই দিকে দৌঁড়াই ও এগিয়ে চলি। আমরা তোমারই রহমত, আশা করি এবং তোমার আযাবকে ভয় করি আর তোমার আযাবতো কাফেরদের জন্যই র্নিধারিত। (সহীহ আল বায়হাকি, ২/২১০)
নামাজে পড়ার সময় যদি সুরাহ ও দোয়া সমূহের অর্থ এবং ভাবের দিকে খেয়াল রাখি ইনশা আল্লাহ নামাজে মনোযোগ ধরে রাখা সহজ হবে।

শারিন শফি অদ্রিতার মূল লেখা থেকে সংকলিত।

 

আরও পড়ুন…

Al Qurans 100 Advices To Mankind-মানবজাতির প্রতি আল কুরআনের ১০০ উপদেশ

১। সত্য ও মিথ্যার মিশ্রণ করা যাবে না
ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা সত্যকে মিথ্যার সঙ্গে মিশ্রিত কোরো না। এবং জেনেশুনে সত্য গোপন কোরো না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৪২)
২। সৎ কাজ নিজে করে অন্যকে করতে বলো
ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা কি মানুষকে সৎকর্মের নির্দেশ দাও, আর নিজেদের বিস্মৃত হও…?’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৪৪)
৩। বিবাদে লিপ্ত হয়ো না
ইরশাদ হয়েছে, ‘…দুষ্কৃতকারীরূপে পৃথিবীতে নৈরাজ্য সৃষ্টি কোরো না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৬০)
৪। কারো মসজিদে যাওয়ার পথে বাধা দিয়ো না
ইরশাদ হয়েছে, ‘তার চেয়ে বড় জালিম আর কে, যে আল্লাহর (ঘর) মসজিদে তাঁর নাম স্মরণ করতে বাধা দেয় এবং এর বিনাশসাধনে প্রয়াসী হয়…?’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১১৪)
৫। কারো অন্ধ অনুসরণ করা যাবে না
ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন তাদের বলা হয়, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তা তোমরা অনুসরণ করো; তারা বলে, না, বরং আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদের যাতে পেয়েছি, তার অনুসরণ করব…।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৭০)
৬। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ কোরো না
ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদাররা, তোমরা অঙ্গীকার পূর্ণ করো…।’ (সুরা : মায়েদা, আয়াত : ১)
৭। অন্যায়ভাবে কারো সম্পদ ভোগ করবে না
ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস কোরো না…।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৮)
৮। সীমা লঙ্ঘন করা যাবে না
ইরশাদ হয়েছে, ‘…সীমা লঙ্ঘন কোরো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমা লঙ্ঘনকারীদের ভালোবাসেন না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৯০)
৯। আল্লাহর পথে ব্যয় করো
ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় করো…।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৯৫)
১০। এতিমদের সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ করো
ইরশাদ হয়েছে, ‘মানুষ তোমাকে এতিমদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, বলে দাও, তাদের জন্য সুব্যবস্থা করা উত্তম…।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২২০)
১১। ঋতুস্রাবের সময় সহবাস পরিহার করো
ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা ঋতুস্রাবের সময় যৌন সঙ্গম কোরো না। (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২২২)
১২। শিশুকে দুই বছর বুকের দুধ খাওয়াও
ইরশাদ হয়েছে, ‘শিশুকে পূর্ণ দুই বছর দুধ পান করাও।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৩০)
১৩। সৎ শাসক নির্বাচন করো
ইরশাদ হয়েছে, ‘সৎ গুণ দেখে শাসক নির্বাচন করো।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৪৭)
১৪। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি নয়
ইরশাদ হয়েছে, ‘দ্বিনের ব্যাপারে কোনো জবরদস্তি নেই। (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৫৬)
১৫। মানুষের নিঃস্বার্থ উপকার করো
ইরশাদ হয়েছে, ‘প্রতিদান কামনা করে দান বিনষ্ট কোরো না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৬৪)
১৬। অন্যের বিপদে সাহায্য করো
ইরশাদ হয়েছে, ‘প্রয়োজনে সহযোগিতা করো।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৭৩)
১৭। সুদ পরিহার করো
ইরশাদ হয়েছে, ‘সুদ গ্রহণ কোরো না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৭৫)
১৮। অপারগ ব্যক্তির ওপর সদয় হও
ইরশাদ হয়েছে, ‘যদি ঋণগ্রহীতা অভাবগ্রস্ত হয়, তবে সচ্ছলতা আসা পর্যন্ত সময় দাও।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৮০)
১৯। হিসাব সংরক্ষণ করো
ইরশাদ হয়েছে, ‘ঋণের বিষয় লিখে রাখো।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৮২)
২০। আমানত রক্ষা করো
ইরশাদ হয়েছে, ‘আমানত রক্ষা করো।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৮৩)
২১। পরনিন্দা পরিহার করো
ইরশাদ হয়েছে, ‘কারো গোপন তথ্য অনুসন্ধান কোরো না এবং পরনিন্দা কোরো না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৮৩)
২২। সব নবীর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করো
ইরশাদ হয়েছে, ‘সব নবীর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করো।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৮৫)
২৩। আল্লাহ চেষ্টা অনুযায়ী প্রতিদান দেন
ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ সাধ্যের বাইরে কারো ওপর বোঝা চাপিয়ে দেন না। সে তা-ই পায় যা তার অর্জন।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৮৬)
২৪। আল্লাহ বিচ্ছিন্নতা পছন্দ করেন না
ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ো না।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১০৩)
২৫। সত্যের প্রতি আহ্বানকারী থাকা চাই
ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের ভেতর এমন একটি দল থাকা উচিত, যারা ভালো কাজের প্রতি আহ্বান জানাবে, সৎ কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে বারণ করবে।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১০৪)
২৬। কোমলভাষী হও
ইরশাদ হয়েছে, ‘রূঢ় ভাষা ব্যবহার কোরো না।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৫৯)
২৭। সৃষ্টিজগতে আল্লাহর অনুসন্ধান করো
ইরশাদ হয়েছে, ‘এই বিশ্বের বিস্ময় ও সৃষ্টি নিয়ে গভীর চিন্তাভাবনা করো।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৯১)
২৮। নারী-পুরুষ সবাই তার কর্মফল পাবে
ইরশাদ হয়েছে, ‘নারী ও পুরুষ উভয়ই তাদের কৃতকর্মের সমান প্রতিদান পাবে।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৯৫)
২৯। প্রাপ্তদের উত্তরাধিকারের সম্পদ বুঝিয়ে দাও
ইরশাদ হয়েছে, ‘মৃতের সম্পদ তার পরিবারের সদস্যদের ভেতর বণ্টন করতে হবে।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৭)
৩০। নারীদের উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত কোরো না
ইরশাদ হয়েছে, ‘সম্পদের উত্তরাধিকারে নারীদেরও সুনির্দিষ্ট অংশ রয়েছে।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৭)
৩১। অনাথের সম্পদ আত্মসাত্ কোরো না
ইরশাদ হয়েছে, ‘অনাথদের সম্পদ আত্মসাত্ কোরো না।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১০)
৩২। নিষিদ্ধ নারীকে বিয়ে কোরো না
ইরশাদ হয়েছে, ‘যাদের সঙ্গে রক্তের সম্পর্ক রয়েছে তাদের বিয়ে কোরো না।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ২৩)
৩৩। অন্যায়ভাবে সম্পদ হরণ কোরো না
ইরশাদ হয়েছে, ‘অন্যায়ভাবে কারো সম্পদ ভক্ষণ কোরো না।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ২৯)
৩৪। পুরুষ পরিবারের অভিভাবক হবে
ইরশাদ হয়েছে, ‘পরিবারের অভিভাবকত্ব ও অর্থ ব্যয় পুরুষের দায়িত্ব।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৩৪)
৩৫। সদাচারী হও
ইরশাদ হয়েছে, ‘অন্যের প্রতি সদাচারী হও।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৩৬)
৩৬। কৃপণ হয়ো না
ইরশাদ হয়েছে, ‘কার্পণ্য কোরো না এবং অন্যকে কার্পণ্য শিক্ষা দিয়ো না।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৩৭)
৩৭। বিদ্বেষ পরিহার করো
ইরশাদ হয়েছে, ‘বিদ্বেষী হয়ো না।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৫৪)
৩৮। ন্যায়বিচার করো
ইরশাদ হয়েছে, ‘মানুষের প্রতি ন্যায়বিচার করো।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৫৮)
৩৯। মানুষ হত্যা কোরো না
ইরশাদ হয়েছে, ‘পরস্পরকে হত্যা কোরো না।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৯২)
৪০। বিশ্বাস ভঙ্গকারীদের পক্ষপাত কোরো না
ইরশাদ হয়েছে, ‘বিশ্বাসঘাতকদের পক্ষ নিয়ে বিতর্ক কোরো না।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১০২)
৪১। সত্যের ওপর অবিচল থাকো
ইরশাদ হয়েছে, ‘ন্যায়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকো।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১৩৫)
৪২। অঙ্গীকার পূর্ণ করো
ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! তোমরা অঙ্গীকার পূর্ণ করো।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ১)
৪৩। সৎকাজে পরস্পরকে সহযোগিতা করো
ইরশাদ হয়েছে, ‘সৎকাজ ও খোদাভীতির ব্যাপারে পরস্পরকে সহযোগিতা করো।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ২)
৪৪। সীমা লঙ্ঘনের ব্যাপারে সহযোগিতা কোরো না
ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা পাপ ও সীমা লঙ্ঘনের ব্যাপারে পরস্পরকে সহযোগিতা কোরো না।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ২)
৪৫। সত্যের অনুগামী হও
ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! তোমরা আল্লাহর উদ্দেশে সাক্ষ্যদানের ক্ষেত্রে সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ৮)
৪৬। অপরাধীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাও
ইরশাদ হয়েছে, ‘পুরুষ চোর ও নারী চোর, তাদের হাত কেটে দাও। এটা তাদের কৃতকর্মের ফল এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে দৃষ্টান্তমূলক দণ্ড।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ৩৮)
৪৭। পাপ ও অবৈধ জিনিসের পেছনে শ্রম ব্যয় কোরো না
ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের অনেককেই তুমি দেখবে পাপে, সীমালঙ্ঘনে ও অবৈধ ভক্ষণে তৎপর। তারা যা করে নিশ্চয় তা নিকৃষ্ট।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ৬২)
৪৮। মাদকদ্রব্য বর্জন করো
ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! নিশ্চয় মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদি ও ভাগ্য নির্ণায়ক তীর ঘৃণ্য বস্তু, শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন করো।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ৯০)
৪৯। জুয়া খেলো না
ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! নিশ্চয় মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদি ও ভাগ্য নির্ণায়ক তীর ঘৃণ্য বস্তু, শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন করো।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ৯০)
৫০। পৃথিবীতে ভ্রমণ করো
ইরশাদ হয়েছে, ‘বলুন! তোমরা পৃথিবীতে পরিভ্রমণ করো, অতঃপর দেখো, যারা সত্যকে অস্বীকার করে তাদের পরিণাম কী হয়েছিল!’ (সুরা আনআম, আয়াত : ১১)
৫১। আধিক্য সত্যের মানদণ্ড নয়
ইরশাদ হয়েছে, ‘যদি তুমি পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষের কথামতো চলো, তবে তারা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করবে। তারা তো শুধু অনুমানের অনুসরণ করে এবং তারা শুধু অনুমানভিত্তিক কথা বলে।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ১১৬)
৫২। সঠিক ওজনে লেনদেন করো
ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা ন্যায্য পরিমাপ ও ওজন পূর্ণ করবে।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ১৫২)
৫৩। অহংকার পতনের মূল
ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি এই স্থান থেকে নেমে যাও। এখানে থেকে তুমি অহংকার করবে, তা গ্রহণযোগ্য নয়। সুতরাং তুমি বের হয়ে যাও। নিশ্চয় তুমি অধমদের অন্তর্ভুক্ত।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৩)
৫৪। নামাজের সময় সুন্দর পোশাক পরিধান করো
ইরশাদ হয়েছে, ‘হে আদম সন্তান, তোমরা প্রত্যেক নামাজের সময় সুন্দর পোশাক পরিধান করো।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৩১)
৫৫। অপচয়কারীকে আল্লাহ পছন্দ করেন না
ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা খাও এবং পান করো। তবে অপচয় কোরো না। নিশ্চয় আল্লাহ অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৩১)
৫৬। অন্যের ত্রুটিবিচ্যুতি ক্ষমা করো
ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনি ক্ষমাপরায়ণ হোন।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৯৯)
৫৭। যুদ্ধের ময়দান থেকে পালাবে না
ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা, যখন তোমরা কাফির বাহিনীর মুখোমুখি হবে তখন তোমরা পৃষ্ঠ প্রদর্শন কোরো না।’ (সুরা : আনফাল, আয়াত : ১৫)
৫৮। নিরাপত্তাপ্রত্যাশীদের নিরাপত্তা দাও
ইরশাদ হয়েছে, ‘মুশরিকদের কেউ আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করলে আপনি তাকে আশ্রয় দেবেন, যেন সে আল্লাহর বাণী শুনতে পারে।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৬)
৫৯। আল্লাহ পবিত্র ব্যক্তিকে ভালোবাসেন
ইরশাদ হয়েছে, ‘সেখানে রয়েছে এমন মানুষ, যারা পবিত্রতা অর্জন করতে পছন্দ করে। আর আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীকে ভালোবাসেন।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ১০৮)
৬০। আল্লাহঅনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না
ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৩)
৬১। অজ্ঞতাবশত ভুল হলে আল্লাহ ক্ষমা করেন
ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর যারা অজ্ঞতাবশত মন্দ কাজ করে তারা পরে তওবা করলে এবং নিজেদের সংশোধন করলে তাদের প্রতি তাদের প্রতিপালক অবশ্যই অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ১১৯)
৬২। ইসলাম প্রচারে কৌশলী হও
ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি আল্লাহর পথে প্রজ্ঞা ও উত্তম উপদেশের মাধ্যমে আহ্বান করো। তাদের সঙ্গে উত্তম পন্থায় বিতর্কে লিপ্ত হও। নিশ্চয় তোমার প্রভু পথভ্রষ্টদের সম্পর্কে সবিশেষ অবগত এবং সত্য পথের অনুসারীদের ব্যাপারেও সর্বোত্তম জানেন।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ১২৫)
৬৩। কেউ কারো পাপের বোঝা বহন করবে না
ইরশাদ হয়েছে, ‘যে সৎপথ অনুসরণ করে সে নিজের কল্যাণের জন্য সৎপথ অনুসরণ করে এবং যে পথভ্রষ্ট হবে সে নিজের ধ্বংসের জন্যই তা করবে। কেউ কারো বোঝা বহন করবে না। আমি রাসুল প্রেরণ করার পূর্ব পর্যন্ত কাউকে শাস্তি প্রদান করি না।’ (সুরা : বনি ইসরাইল, আয়াত : ১৫)
৬৪। পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার কোরো
ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন, তিনি ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত না করতে এবং মা-বাবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে।’ (সুরা : বনি ইসরাইল, আয়াত : ২৩)
৬৫। মা-বাবার সঙ্গে মন্দ ব্যবহার কোরো না
ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের একজন বা উভয়ই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়, তাদের ‘উফ’ বলো না, তাদের ধমক দিয়ো না; তাদের সঙ্গে বিনম্র ভাষায় কথা বলো।’ (সুরা : বনি ইসরাইল, আয়াত : ২৩)
৬৬। জীবনে মধ্যপন্থা অবলম্বন করো
ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি তোমার হাত তোমার গ্রীবায় আবদ্ধ করে রেখো না এবং তা সম্পূর্ণ প্রসারিতও কোরো না। তাহলে তুমি তিরস্কৃত ও নিঃস্ব হয়ে যাবে।’ (সুরা : বনি ইসরাইল, আয়াত : ২৯)
৬৭। সন্তান হত্যা কোরো না
ইরশাদ হয়েছে, ‘দারিদ্র্যের ভয়ে তোমরা সন্তান হত্যা কোরো না। তাদের এবং তোমাদের আমিই জীবিকা প্রদান করি। নিশ্চয় তাদের হত্যা করা মহাপাপ।’ (সুরা : বনি ইসরাইল, আয়াত : ৩১)
৬৮। অবাধ যৌনাচারে লিপ্ত হয়ো না
ইরশাদ হয়েছে, ‘ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট আচরণ।’ (সুরা : বনি ইসরাইল, আয়াত : ৩২)
৬৯। না জেনে কোনো কিছুর অনুসরণ করবে না
ইরশাদ হয়েছে, ‘যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই তার অনুসরণ কোরো না। নিশ্চয় কান, চোখ, হৃদয়—এর প্রত্যেকটি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে।’ (সুরা : বনি ইসরাইল, আয়াত : ৩২)
৭০। নম্র ভাষায় কথা বলো
ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা তার সঙ্গে নম্র ভাষায় কথা বলবে। হয়তো সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা ভয় পাবে।’ (সুরা : ত্বহা, আয়াত : ৪৪)
৭১। অনর্থক কাজ থেকে বিরত থাকো
ইরশাদ হয়েছে, ‘(মুমিন তারা) যারা অনর্থক ক্রিয়াকলাপ থেকে বিরত থাকে।’ (সুরা : মুমিনুন, আয়াত : ৩)
৭২। অনুমতি ছাড়া কারো ঘরে প্রবেশ কোরো না
ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! অন্যের ঘরে অনুমতি গ্রহণ বা সালাম প্রদান না করে প্রবেশ কোরো না। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করো।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ২৭)
৭৩। লজ্জা ও শালীনতার সঙ্গে চলো
ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনি মুমিন পুরুষদের বলে দিন যেন তারা তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থান হেফাজত করে। এটাই তাদের জন্য পবিত্রতম। তারা যা করে আল্লাহ নিশ্চয়ই তা জানেন। এবং আপনি মুমিন নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং লজ্জাস্থান হেফাজত করে; তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তবে ওইটুকু ব্যতীত যা স্বাভাবিকভাবে প্রকাশ পায়।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ২৭)
৭৪। মা-বাবার ঘরে প্রবেশের আগেও অনুমতি নাও
ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! তোমাদের মালিকাধীন দাস-দাসীরা এবং তোমাদের মধ্যে যারা এখনো বয়ঃপ্রাপ্ত হয়নি তারা যেন তিন সময় তোমাদের ঘরে প্রবেশের পূর্বে অনুমতি নেয়—ফজরের নামাজের পূর্বে, দুপুরে যখন তোমরা তোমাদের পোশাক খুলে রাখ এবং এশার নামাজের পর। এই তিন সময় তোমাদের গোপনীয়তার সময়।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ৫৮)
৭৫। বিনম্র হয়ে চলাফেরা করো
ইরশাদ হয়েছে, ‘রহমানের বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে।’ (সুরা : ফোরকান, আয়াত : ৬৩)
৭৬। মানুষের প্রতি দয়া করো
ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তোমার প্রতি যেমন অনুগ্রহ করেছেন, তুমিও তেমন অনুগ্রহ করো। পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি কোরো না।’ (সুরা : কাসাস, আয়াত : ৭৭)
৭৭। সংকটকালেও আল্লাহর পথে অটল থাকো
ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমার প্রতি আল্লাহর আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর তারা যেন তোমাকে কিছুতেই সেগুলো থেকে বিমুখ না করে। তুমি তোমার প্রতিপালকের প্রতি আহ্বান করো এবং কিছুতেই মুশরিকদের দলভুক্ত হইয়ো না।’ (সুরা : ফোরকান, আয়াত : ৮৭)
৭৮। সমকামিতা জঘন্যতম অপরাধ
ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরাই তো পুরুষে উপগত হচ্ছো, তোমরাই ডাকাতি করে থাকো, তোমরাই তোমাদের মজলিসে প্রকাশ্যে অপকর্ম করে থাকো। উত্তরে তার সম্প্রদায় শুধু বলল, আমাদের ওপর আল্লাহর শাস্তি নিয়ে এসো—যদি তুমি সত্যবাদী হও।’ (সুরা : আনকাবুত, আয়াত : ২৯)
৭৯। সৎ কাজের আদেশ করো
ইরশাদ হয়েছে, ‘হে পুত্র! নামাজ আদায় করো, সৎ কাজের আদেশ দাও এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করো। বিপদে ধৈর্য ধারণ করো। এটাই তো দৃঢ় সংকল্পের কাজ।’ (সুরা : লোকমান, আয়াত : ১৭)
৮০। মানুষকে অবজ্ঞা কোরো না
ইরশাদ হয়েছে, ‘অহংকারবশত তুমি মানুষকে অবজ্ঞা কোরো না এবং পৃথিবীতে উদ্ধতভাবে বিচরণ কোরো না। নিশ্চয় আল্লাহ কোনো উদ্ধত অহংকারীকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা : লোকমান, আয়াত : ১৮)
৮১। কণ্ঠস্বর নিচু রাখো
ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি সংযতভাবে পথ চলো এবং তোমার কণ্ঠস্বর নিচু রাখো। নিশ্চয়ই গাধার স্বর সর্বাধিক শ্রুতিকটু।’ (সুরা লোকমান, আয়াত : ১৯)
৮২। নারী অশালীনভাবে নিজেকে প্রদর্শন করবে না
ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা ঘরে অবস্থান করো এবং পূর্ববর্তী জাহেলি (বর্বর) যুগের মতো নিজেদের প্রদর্শন করে বেড়াবে না।’ (সুরা আহজাব, আয়াত : ৩৩)
৮৩। অপরাধ যত বড় হোক আল্লাহ ক্ষমা করবেন
ইরশাদ হয়েছে, ‘বলুন! হে আমার বান্দাগণ তোমাদের মধ্যে যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গুনাহই ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।’ (সুরা ঝুমার, আয়াত : ৫৩)
৮৪। আল্লাহর নিকট আশ্রয় গ্রহণ করো
ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের অভিমুখী হও এবং তাঁর নিকট আত্মসমর্পণ করো; তোমাদের ওপর শাস্তি আসার আগে, যখন তোমাদের সাহায্য করা হবে না।’ (সুরা ঝুমার, আয়াত : ৫৪)
৮৫। মন্দের বিপরীতে ভালো করো
ইরশাদ হয়েছে, ‘ভালো-মন্দ কখনো সমান হতে পারে না। মন্দ প্রতিহত করো ভালোর দ্বারা। ফলে তোমার সঙ্গে যার শত্রুতা আছে, সে অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়ে যাবে।’ (সুরা হা মিম সাজদা, আয়াত : ৩৪)
৮৬। পরামর্শ করে কাজ করো
ইরশাদ হয়েছে, ‘(মুমিনরা) পরস্পরের সঙ্গে পরামর্শ করে কাজ করে।’ (সুরা শুরা, আয়াত : ৩৮)
৮৭। আল্লাহ আপস পছন্দ করেন
ইরশাদ হয়েছে, ‘মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই। সুতরাং তোমরা ভাইদের ভেতর শান্তি স্থাপন করো আর আল্লাহকে ভয় করো যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও।’ (সুরা হুজরাত, আয়াত : ১০)
৮৮। কাউকে উপহাস করো না
ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! কোনো পুরুষ যেন অপর কোনো পুরুষকে উপহাস না করে; কেননা যাকে উপহাস করা হচ্ছে সে তার চেয়ে উত্তম হতে পারে। কোনো নারী যেন অপর কোনো নারীকে উপহাস না করে। কেননা যাকে উপহাস করা হচ্ছে সে উপহাসকারী নারীর চেয়ে উত্তম হতে পারে।’ (সুরা হুজরাত, আয়াত : ১১)
৮৯। সন্দেহপ্রবণতা ভালো নয়
ইরশাদ হয়েছে, ‘মুমিনরা অধিক পরিমাণে সন্দেহ করা থেকে বিরত থাকো। নিশ্চয়ই কিছু কিছু সন্দেহ পাপতুল্য।’ (সুরা হুজরাত, আয়াত : ১২)
৯০। পরনিন্দা করো না
ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা পরস্পরের অনুপস্থিতিতে নিন্দা করো না। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? বস্তুত তোমরা তা ঘৃণা করো। আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু।’ (সুরা হুজরাত, আয়াত : ১২)
৯১। সম্মানের ভিত্তি খোদাভীতি
ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী থেকে। অতঃপর তোমাদের বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হতে পারো। তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি আল্লাহর কাছে অধিক সম্মানিত যে আল্লাহকে অধিক ভয় করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব কিছু জানেন এবং সব কিছুর খবর রাখেন।’ (সুরা : হুজরাত, আয়াত : ১৩)
৯২। অতিথির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করো
ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনার নিকট ইবরাহিমের সম্মানিত মেহমানদের ঘটনা বিবৃত হয়েছে? যখন তারা তাঁর কাছে উপস্থিত হয়ে বলল, সালাম। উত্তরে তিনি বললেন, সালাম। এরা তো অপরিচিত লোক। অতঃপর ইবরাহিম তার নিকট গেল এবং একটি মাংসল গরুর বাছুর ভাজা নিয়ে এলো এবং তাদের সামনে রাখল।’ (সুরা : জারিয়াত, আয়াত : ২৪-২৭)
৯৩। দাতব্যকাজে অর্থ ব্যয় করো
ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করো এবং আল্লাহ তোমাদেরকে যা কিছুর উত্তরাধিকারী করেছেন তা থেকে ব্যয় করো। তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও ব্যয় করে, তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার।’ (সুরা : হাদিদ, আয়াত : ৭)
৯৪। বৈরাগ্যবাদ মানুষের সৃষ্টি
ইরশাদ হয়েছে, ‘বৈরাগ্যবাদ এটা তারা নিজেরাই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য প্রবর্তন করেছিল। আমি তাদের এই বিধান দিইনি। অথচ তারা এটাও ঠিকমতো পালন করেনি।’ (সুরা : হাদিদ, আয়াত : ২৭)
৯৫। আলেমদের আল্লাহ মর্যাদা দান করেছেন
ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন। তোমরা যা করো আল্লাহ তা সম্মুখ অবগত।’ (সুরা : মুজাদালা, আয়াত : ৫৮)
৯৬। অমুসলিমদের সঙ্গেও উত্তম আচরণ করতে হবে
ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা দ্বিনের ব্যাপারে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে নিজ মাতৃভূমি থেকে বের করে দেয়নি, তাদের প্রতি মহানুভবতা প্রদর্শন ও ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করেননি।’ (সুরা : মুমতাহিনা, আয়াত : ৮)
৯৭। ঋণদাতার জন্য রয়েছে পুরস্কার
ইরশাদ হয়েছে, ‘যদি তোমরা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান করো, তিনি তোমাদের জন্য তা বহুগুণ বৃদ্ধি করে দেবেন এবং তিনি তোমাদের ক্ষমা করবেন। আল্লাহ গুণগ্রাহী, ধৈর্যশীল।’ (সুরা : তালাক, আয়াত : ১৭)
৯৮। তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ো
ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয় আপনার প্রতিপালক জানেন যে আপনি জাগরণ করেন কখনো রাতের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ, কখনো অর্ধাংশ এবং কখনো এক-তৃতীয়াংশ; জাগে তোমার সঙ্গে যারা আছে তাদের একটি দলও। আল্লাহই নির্ধারণ করেন দিন-রাতের পরিমাণ।’ (সুরা : মুজাম্মিল, আয়াত : ২০)
৯৯। ভিক্ষুকদের ধমক দিয়ো না
ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং তুমি ভিক্ষুককে ধমক দিয়ো না।’ (সুরা : দুহা, আয়াত : ১০)
১০০। আল্লাহর একত্ববাদের সাক্ষ্য
ইরশাদ হয়েছে, ‘বলুন! আল্লাহ এক-অদ্বিতীয়, তিনি অমুখাপেক্ষী, তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাঁকেও কেউ জন্ম দেয়নি। এবং তাঁর সমতুল্য কেউ নেই।’ (সুরা : ইখলাস)
উৎসঃ দৈনিক কালের কণ্ঠ, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯

আইডিসির সাথে যোগ দিয়ে উভয় জাহানের জন্য ভালো কিছু করুন!

 

আইডিসি এবং আইডিসি ফাউন্ডেশনের ব্যপারে  জানতে  লিংক০১ ও লিংক০২ ভিজিট করুন।

আইডিসি  মাদরাসার ব্যপারে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। 

আপনি আইডিসি  মাদরাসার একজন স্থায়ী সদস্য /পার্টনার হতে চাইলে এই লিংক দেখুন.

আইডিসি এতীমখানা ও গোরাবা ফান্ডে দান করে  দুনিয়া এবং আখিরাতে সফলতা অর্জন করুন।

কুরআন হাদিসের আলোকে বিভিন্ন কঠিন রোগের চিকিৎসা করাতেআইডিসি ‘র সাথে যোগাযোগ করুন।

ইসলামিক বিষয়ে জানতে এবং জানাতে এই গ্রুপে জয়েন করুন।