Prayer Of Isteska-অনাবৃষ্টি ও পানি স্বল্পতার সময় আল্লাহর কাছে ইস্তিস্কার নামাজ।
Prayer Of Isteska-অনাবৃষ্টি ও পানি স্বল্পতার সময় আল্লাহর কাছে ইস্তিস্কার নামাজ।
ইস্তিস্কার নামাজ শরীয়তভুক্ত হওয়ার দলিল:
ইস্তিস্কার নামাজ সুন্নতে মুয়াক্কাদা; কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইস্তিস্কার নামাজ আদায় করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে যায়েদ থেকে বর্ণিত এক হাদীসে এসেছে, «রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাজের মাঠের দিকে বের হয়ে গেলেন, অতঃপর আল্লাহর কাছে পানি তলব করলেন। তিনি কিবলামুখী হলেন। তাঁর চাদর উল্টিয়ে পরলেন এবং দু রাকাত নামাজ আদায় করলেন।»(বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম)
ইস্তিস্কার নামাজের সময়:
যখন জমিন শুকিয়ে যায় অথবা অনাবৃষ্টি শুরু হয় অথবা কূপ ও ঝর্নার পানি কমে যায় অথবা নদী শুকিয়ে যায় তখন সূর্যোদয়ের পর বিশ মিনিটের মতো সময় অতিবাহিত হলে ইস্তিস্কার নামাজ পড়তে হয়, ঈদের নামাজের সময়ের মতোই।
ইস্তিস্কার নামাজের জায়গা:
ইস্তিস্কার নামাজ মসজিদে নয় বরং নামাজের মাঠে আদায় করা সুন্নত; কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরূপই করেছেন। তবে প্রয়োজনের সময় মসজিদেও পড়া যাবে।
ইস্তিস্কার নামাজের বর্ণনা:
- ১. ইস্তিস্কার নামাজ দু রাকাত। আযান ইকামতবিহীন প্রকাশ্য কিরাআতে উক্ত নামাজ আদায় করতে হয়।
- ২. মুসল্লী প্রথম রাকাতে তাকবীরে তাহরিমার পর সাতবার তাকবীর দেবে। আর দ্বিতীয় রাকাতে পাঁচ বার তাকবীর দেবে।
- ৩. প্রত্যেক তাকবীরের সময় হাত উঠাবে এবং তাকবীরগুলোর মাঝে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর দরূদ পড়বে।
- ৪. নামাজের পর ইমাম খুতবা দিবেন। খুতবায় বেশী বেশী ইস্তেগফার ও কুরআন তিলাওয়াত করবেন। অতঃপর দু»হাত উঠিয়ে মিনতির সঙ্গে দুআ করবেন এবং হাদীসে বর্ণিত দুআগুলো বেশী পড়বেন।
- ৫. অতঃপর ইমাম কিবলামুখী হয়ে তার চাদর উল্টিয়ে পরবেন, ডান দিকের অংশ বাম দিকে এবং বাম দিকের অংশ ডান দিকে দিবেন, সাথে সাথে চুপে চুপে আল্লাহর কাছে দুআ করতে থাকবেন।
ইস্তিস্কার নামাজের কিছু আহকাম:
১. ইস্তিস্কার নামাজের পূর্বে ওয়াজ নসীহত করা, মানুষের হৃদয় গলে এমন কথা বার্তা বলা, যেমন গুনাহ থেকে তাওবা করার গুরুত্ব তুলে ধরা। জুলুম অন্যায়ভাবে হাতিয়ে নেয়া সম্পদ তার হকদারের কাছে পৌঁছে দেয়ার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করা;
কেননা মানুষের পাপ-গুনাহের কারণেই বৃষ্টিপাত বন্ধ করে দেয়া হয়। আর তাওবা ইস্তিগফার ও তাকওয়া অর্জন দুআ কবুল হওয়া এবং খায়ের ও বরকত লাভের কারণ। অনুরূপভাবে মানুষদেরকে এ উপলক্ষে দান খয়রাতের ব্যাপারেও উৎসাহ দেয়া; কেননা দান খয়রাত আল্লাহর রহমত আকৃষ্ট করার কারণ।
২. ইস্তিস্কার নামাজের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট দিন ঠিক করা, যাতে মানুষ ওই দিনের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে অপেক্ষায় থাকে। ইস্তিস্কার নামাজে খুশু-খুজু, বিনয়- নম্রতার সাথে গমন করা সুন্নত। সাথে সাথে একমাত্র আল্লাহ তাআলাই যে বান্দার সকল হাজত-প্রয়োজন পূরণ করেন এ মনোভাবও অন্তরে জাগ্রত রাখা উচিত।
ইবনে আব্বাস রাযি. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইস্তিস্কার নামাজের জন্য বের হওয়ার বর্ণনা দিয়ে বলেন,«নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনাড়ম্বরভাবে, বিনয়-নম্রতা ও আকুতিসহ বের হয়ে নামাজের মাঠে উপস্থিত হয়েছেন| (বর্ণনায় আবু দাউদ)
৩. ইস্তিস্কার খুতবায় হাত উঠিয়ে বেশি বেশি দুআ ও ইস্তিগফার করা।
বৃষ্টিপাত হলে যা করা মুস্তাহাব:
বৃষ্টিপাতের শুরুতে বৃষ্টিতে নামা ও ভেজা মুস্তাহাব; হাদীসে এসেছে, আনাস রাযি. বলেন,«রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে থাকা অবস্থায় আমাদেরকে বৃষ্টি পেয়ে বসল। তিনি বলেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর কাপড় গুটালেন। তিনি বৃষ্টিতে ভিজলেন। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, আপনি এমন করলেন কেন? তিনি বললেন, কেননা এ বৃষ্টি তার রবের পক্ষ থেকে নতুন এসেছে।»(বর্ণনায় মুসলিম)
বৃষ্টি একমাত্র আল্লাহ তাআলার দয়া ও করুণা:
একজন মুসলমানের বিশ্বাস করা উচিত যে, আল্লাহ তাআলার দয়া ও করুণার ফলেই বৃষ্টি বর্ষিত হয়। যারা বলে যে অমুক গ্রহের কারণে বৃষ্টি হয়েছে তাদের কথা ভুল, এটা বরং শিরক।
বাংলাদেশে প্রচলিত এবং ইসলামী ধারার ব্যাংকিং ব্যবস্থার মধ্যে পার্থক্য কী?
ইসলামী ব্যাংক এবং প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থার মধ্যে পার্থক্য কী?
বাংলাদেশে সম্প্রতি প্রচলিত ধারার বেশ কিছু ব্যাংকে ইসলামী ধারার ব্যাংকের একটি ‘উইণ্ডো’ খোলা হয়েছে।
এদের মূল পার্থক্যটা কী – জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের শিক্ষক তাসনিমা খান বলছিলেন, মূল পার্থক্যের জায়গাটা হচ্ছে সুদ এবং মুনাফার হিসেবের ক্ষেত্রে।
তিনি বলছিলেন “মূল ধারার ব্যাংকিং এ সুদের বা ইন্টারেস্টের বিষয়টা থাকে। আমরা যখন ব্যাংকে টাকা জমা রাখি তখন একটা নির্দিষ্ট হারে সুদ দেয়াই হচ্ছে। সেখানে ব্যাংকের লাভ বা ক্ষতি হোক আমরা যারা টাকা জমা রাখছি আমাদের কাছে বিবেচ্য বিষয় হয় না। কিন্তু ইসলামে যেহেতু সুদকে হারাম বলা হয়ে থাকে তাই এটা অনেকের কাছে অনেকটা গ্যাম্বলিং এর মত”।
মূল পার্থক্য সুদ ও লভ্যাংশের
তাসনিমা খান বলছিলেন “ইসলামের ক্ষেত্রে বলা হয়ে থাকে এটা একটা শেয়ারিং মেথড হবে। ‘প্রফিট-লস-শেয়ারিং’ অর্থাৎ ব্যাংক যেহেতু আমার কাছ থেকে আমানত রাখছে, ব্যাংকের যদি লাভ হয় তাহলে আমার আমানতের উপর আমি লভ্যাংশ পেতে পারি। কিন্তু ব্যাংকের যদি ক্ষতি হয় তাহলে আমি লভ্যাংশ পাওয়ার জন্য যোগ্য হব না। এটাই প্রচলিত এবং ইসলামী ধারা ব্যাংকের মধ্যে মূল পার্থক্য”।
ইসলামী ধারার ব্যাংকিংএর কয়েকটি দিক
মুদারাবা কনসেপ্ট- মুনাফার অংশীদারি
মুরাবাহা- লাভে বিক্রি (লোনের ক্ষেত্রে)
মুসারাকা- লাভ লোকসানের ভাগাভাগি
আর এই লাভ লোকসানের ভাগাভাগির ক্ষেত্রে ইসলামী ধারা মানা হয় না বলে মনে করেন অনেকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি নুরুল আমিন বলছিলেন, দুই ধারার ব্যাংকের একটা মিল হল তাদের কর্তৃপক্ষ বা রেগুলেটরি এক অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোথাও ইসলামী কোন উইং নেই।
মি. আমিন বলছিলেন, “ইসলামী ধারা ব্যাংকে লাভ বা ক্ষতির উপর মুনাফার অংশ হেরফের হতে পারে। আগে থেকে কোন কিছু নির্দিষ্ট থাকবে না। কিন্তু আমাদের দেশে ইসলামী ব্যাংকে আগে থেকেই জানা যায় রেট, যে আমানতকারী কত শতাংশ মুনাফা পাবে”।
কেন জনপ্রিয় হচ্ছে ইসলামী ধারার ব্যাংক
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশে যেভাবে ইসলামী ব্যাংক পরিচালনা করা হয়ে থাকে সেটা উদ্বেগের। বাংলাদেশে এগুলো যেভাবে পরিচালিত হয় সেখানে পূর্ণাঙ্গ ভাবে ইসলামী ধারায় পরিচালনার ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতা আছে – বলছেন তারা।
আমাদের দেশের যারা ইসলামী চিন্তা ধারায় বিশ্বাস করেন, তাদের কাছ মনে হতে পারে ব্যাংকে টাকা রাখা হারাম।
তাসনিমা খান বলছিলেন “বেশির ভাগ মানুষের যে চিন্তাধারা সেটাতে তারা মনে করে এই টাকাটা বিনিয়োগ করা হচ্ছে এবং সেখান থেকে রিটার্ন পাচ্ছেন। অর্থাৎ তারা এটাকে গ্যাম্বলিং মনে করেন না। সেই অর্থটাকে তারা বৈধ হিসেবে মনে করে। “
:”এটাতে তাদের একটা স্বস্তির জায়গা তৈরি করে। এর ফলেই প্রচলিত ব্যাংকগুলো তাদের ইসলামী উইনডো ও শাখা রাখছে ইসলামী ব্যাংকের”।
ব্যাংক ডিপোজিটের শরয়ী বিধান
লেখক: মুফতী মনসূরুল হক দা.বা.
ব্যাংক ডিপোজিটের প্রকারভেদ ও তার শরয়ী বিধান, ব্যাংকিং পরিভাষায় ব্যাংক ডিপোজিট চার প্রকার:
১. কারেন্ট একাউন্ট (Current Account) বা চলতি হিসাব।
২. সেভিংস একাউন্ট (Savings Account ) বা সঞ্চয়ী হিসাব।
৩. ফিক্সড একাউন্ট (Fixed Deposit) বা নির্ধারিত মেয়াদি সঞ্চয়।
৪.লকার (Locker) তথা ব্যাংক থেকে লোহার বক্স ভাড়া নিয়ে তাতে টাকা পয়সা বা মূল্যবান সামগ্রী রেখে তা ব্যাংকের নিকট আমানত রাখা। (ফিকহী মাকালাত ৩/১৩-১৫)
ব্যাংক ডিপোজিটগুলোর শরয়ী অবস্থান:
প্রথম তিন প্রকার করজের হুকুমে দুটি শর্তের কারণে:
এক. এই তিন প্রকারের (কারেন্ট, সেভিংস ও ফিক্সড) ডিপোজিটারগণ ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে তাদের অর্থের যামিন বা জিম্মাদার বানায়।
দুই. ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে তাদের গচ্ছিত অর্থের যথেচ্ছা ব্যবহারের সার্বিক ক্ষমতা প্রদান করে থাকে।
চতুর্থ প্রকার তথা লকার (Locker) এটা বর্তমান প্রচলন ও শরয়ী দৃষ্টিকোণ উভয় বিবেচনায় আমানত হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। (ফিকহী মাকালাত ৩/১৮)
সাধারণ ব্যাংগুলোতে অর্থ রাখার শরয়ী হুকুম:
১. জান ও মালের নিরাপত্তার খাতিরে কারেন্ট একাউন্টে টাকা রাখা জায়িয আছে। যেহেতু কারেন্ট একাউন্ট হোল্ডারদেরকে ব্যাংক কর্তৃক কোন মুনাফা প্রদান করা হয় না। বরং তাদের থেকে উল্টা সার্ভিস চার্জ ও অন্যান্য চার্জ কাটা হয়। অতএব, কারেন্ট একাউন্টে টাকা রাখলে সুদি লেন-দেনে অংশগ্রহণ গণ্য হবে না। সুতরাং তা জায়িয আছে।
২.ফিক্সড ডিপোজিট ও সেভিংস একাউন্টে টাকা রাখা জায়িয নেই। কারণ এই উভয় প্রকার একাউন্ট হোল্ডারদেরকে ব্যাংক কর্তৃক মুনাফা প্রদান করা হয় এবং এই উভয় একাউন্টে গচ্ছিত টাকা উম্মতের ঐক্যমতে করজের হুকুমে। আর করজের বিনিময়ে লাভ হাসিল করা শরীয়তে সূদ। অতএব ব্যাংক একাউন্ট হোল্ডারদেরকে মূল টাকার অতিরিক্ত যে টাকাই প্রদান করবে তা স্পষ্ট সূদ হবে। আর সূদ বৈধ হওয়ার কোন সুরত নেই।
সুতরাং যে ব্যক্তি উল্লেখিত একাউন্টে টাকা রাখবে সে ব্যাংকের সাথে হারাম লেন-দেনে শরীক হয়ে যাবে। এ কারণে কোন মুসলমানের জন্য এই দুই প্রকার (সেভিংস এবং ফিক্সড ডিপোজিট) একাউন্টে টাকা রাখা জায়িয নেই । কেউ রেখে থাকলে সুযোগ থাকলে সে একাউন্ট পরিবর্তন করে চলতি হিসাব খুলে সেখানে টাকা রাখবে।
আর যদি কোন কারণে চলতি হিসাব খুলতে অপারগ হয় এবং জান ও মালের নিরাপত্তার জন্য সেভিংস একাউন্ট খুলতে বা জারী রাখতে বাধ্য হয়, তাহলে সে ইস্থিগফার করতে থাকবে এবং ঐ একাউন্টে যে সূদ আসবে তা সাওয়াবের নিয়ত ছাড়া মিসকিনদেরকে বা মসজিদ মাদরাসার বাথরুম নির্মাণের জন্য (কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে) দিয়ে দিবে।
ইসলামী ব্যাংকগুলোর হুকুম:
ইসলামী ব্যাংক একটি মহত উদ্যোগ। উদ্যোক্তাদের আমরা ধন্যবাদ জানাই। যদি এটিকে তারা পূর্ণ ইসলাম অনুযায়ী পরিচালনা করেন। যার জন্য জরুরী হলো;
(ক) বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এই মর্মে অনুমতি না নিয়ে থাকলে অনুমতি নিবে যে, ব্যাংক সরাসরি নিজে বাণিজ্যিক মাল আমদানি ও রপ্তানি করবে।
(খ) প্রত্যেক শাখার কারবার প্রত্যক্ষ করার জন্য একজন বিজ্ঞ আলেমে দ্বীন থাকবে এবং সর্বময় কর্তৃত্ব ম্যানেজারের নয়, মজলিসে শূরার হাতে থাকবে। (ইসলাম আওড় জাদীদ মায়ীশাত পৃ. ১২৬)
১. ইসলামী ব্যাংকের কারেন্ট একাউন্ট সাধারণ ব্যাংকের কারেন্ট একাউন্টের মত জায়িয আছে।
২. ইসলামী ব্যাংকগুলো সেভিংস এবং ফিক্সড ডিপোজিটারদের সাথে টাকা বিনিয়োগের বিভিন্ন ব্যবসায়িক খাত দেখিয়ে যে চুক্তি করে থাকে তাকে শরিয়তের পরিভাষায় আকদে মুযারাবাহ বলে। আর ডিপোজিটারদের পরস্পরের মাঝে হয় আকদে মুশারাকাহ বা অংশীদারিত্বের চুক্তি। যারা সকলে মিলে তাদের অর্থ ও শ্রম ব্যাংকের নিকট সোপর্দ করেছে লাভ-লোকসানের মধ্যে শরীক হওয়ার ভিত্তিতে।
ব্যাংক তাদেরকে নির্দিষ্ট পার্সেন্টিস হিসেবে লাভ দিবে। আর ক্ষতি হলে মুনাফা দ্বারা তা পূরণ করা সম্ভব না হলে ডিপোজিটারকেও তার অংশ অনুপাতে লোকসানের বোঝা নিতে হবে। বাস্তবে এমনটি হলে তা জায়িয হবে। কিন্তু সরেজমিনে অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, ইসলামী ব্যাংকগুলো সূদী ব্যাংকগুলোর সাথে পাল্লা দিয়ে সূদী লেন-দেনের সাথেই বেশী জড়িত।
তারা মুখে মুখে হালাল মুনাফা প্রদানের কথা বললেও সহীহ তরীকায় ইনভেস্ট করে না তথা বেচা-কেনার মধ্যে শরীয়ত যে-সব শর্ত আরোপ করেছে তা সঠিকভাবে রক্ষা করে না। খাতা কলমে ঠিক দেখালেও বাস্তবে করে খামখেয়ালী এবং জনবল না থাকার দোহাই দিয়ে থাকে যা অগ্রহণযোগ্য।
তাই প্রচলিত ইসলামী ব্যাংকগুলোতেও সেভিংস এবং ফিক্সড ডিপোজিট একাউন্ট খোলা জায়িয হবে না। যতক্ষণ না তারা তাদের কার্যক্রম বাস্তব ক্ষেত্রেও শরয়ী পন্থায় নিয়ে আসে এবং বাস্তব অভিজ্ঞতায় তাদের কার্যক্রম সম্পূর্ণ শরীয়ত ভিত্তিক প্রমাণ করতে না পারে। (আল মাবসূত লিস্ সারাখসী ২২/১৩৩)
অমুসলিম দেশের ব্যাংকের হুকুম:
অমুসলিম দেশের অমুসলিম মালিকদের ব্যাংক কর্তৃক প্রদেয় সূদ গ্রহণের ব্যাপারে ফুকাহায়ে কিরামের সমর্থন রয়েছে। যেহেতু তারা এই টাকা মুসলমানদের বিরুদ্ধেই ব্যবহার করে এবং এর মাধ্যমে তারা মুসলমানদেরকে দুর্বল করার বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করে। কাজেই সূদের টাকা ব্যাংকে না ছেড়ে উঠিয়ে নিবে। তার পর সাওয়াবের নিয়ত না করে মিসকিনদেরকে দিয়ে দিবে। (ফিকহী মাকালাত ৩/২২)
আরও পড়ুন…
সূদী টাকার হুকুম:
যারা শরয়ী বিধান না জানার কারণে শরীয়ত বিরোধী পন্থায় লেন-দেন করার কারণে কিছু সূদী টাকা তার মালিকানায় চলে এসেছে কিংবা ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শরী‘আতের বিধি-বিধানের পাবন্দি ছিলনা। কিন্তু এখন সে তাওবা করে সূদ থেকে মুক্তি পেতে চাচ্ছে, তারা সাওয়াবের নিয়ত ছাড়া ঐ টাকা ফকীর-মিসকিন অথবা কোন কল্যাণকর কাজে ব্যয় করে দিবে। (ফিকহী মাকালাত ৩/২২)
আরও পড়ুন…
Polashi Tragedy/পলাশী ট্রাজেডির ২৬৩ বছর ও বিশ্বাসঘাতকদের পরিণতি
২৩ জুন, ১৭৫৭ সাল। এদেশের ইতিহাস সম্পর্কে যারা সামান্যও পড়েছেন, তারাও নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা এবং পলাশী যুদ্ধ সম্পর্কে বেশ অবগত আছেন। আমি আজ আবার নতুন করে আজ থেকে ২৬৩ বছর আগে আজকের এই দিনে পলাশীর আম্রকাননে কীভাবে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয় এবং পরবর্তীতে কীভাবে উপমহাদেশকে দু’শো বছর সেই গোলামীর গ্লানি বয়ে বেড়াতে হয়েছে তা নিয়ে আলাপ করবো না।
যুদ্ধের কাহিনী যেহেতু আমাদের সবারই কম বেশি জানা। তাই সেদিকে না গিয়ে আমি কেবল দুইটা বিষয় নিয়ে একটু আলাপ করবো। প্রথমত; নবাব সিরাজকে নাটক উপন্যাসের মাধ্যমে যেভাবে ইতিহাসের ভিলেন বানানো হয়েছে, আসলে তা কতটুকু ঠিক বা যুদ্ধের পর তার পরিবার ও অনুচরদের সাথে কেমন ব্যবহার করা হয়েছে তা নিয়ে সামান্য বলবো। পাশাপাশি যাদের কারণে পলাশীর পরাজয়, পরবর্তিতে তাদের কী করুণ পরিণতি হয়েছিলো তা আলাপে নিয়ে আসবো।
ভূমিকা না বাড়িয়ে শুরু করি- ইতিহাস সম্পর্কে যারা সচেতন তারা সবাই জানেন ইংরেজদের সাথে পলাশীর প্রান্তরে যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার সময় নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার বাহিনী ছিল ৫০,০০০ হাজার আর রবার্ট ক্লাইভের নেতৃত্বে ইংরেজ বাহিনী ছিল মাত্র ৩৫০০ এর কাছাকাছি।
নবাবের হাতে যে বিপুল সৈন্যসংখ্যা ছিল তা দিয়ে ইংরেজদের এদেশ থেকে বিতাড়িত করা অসম্ভব কাজ ছিল না। এমনকি মীরজাফরের অধীনস্ত যে ১৬০০০ সৈন্য ছিলো, তারাও যদি যুদ্ধে অবতীর্ণ হতো তাহলে নবাবের বিজয় অর্জন একেবারেই স্বাভাবিক ছিল। মীর জাফর থেকে শুরু করে পরাজয়ের জন্য আরও যারা বিশ্বাসঘাতকতা করে পিছনে কলকাটি নেড়েছে তাদের নিয়ে পরে আলাপ করবো।
এখন একটা প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠে সৈন্য সংখ্যা, অস্ত্রভান্ডার, রসদ ও বাহন বিদেশিদের তুলনায় অনেক বেশি, তাছাড়া আপন প্রকৃতি, পরিবেশ সবই ছিল নিজেদের অনুকুলে তথাপি এই ঐতিহাসিক পরাজয় কেন হয়েছিলো?
জাতির মধ্যে অনৈক্য এবং ক্ষমতালোভী স্বার্থান্বেষী বিশ্বাসঘাতক গোষ্ঠীদের ষড়যন্ত্রের পাশাপাশি একটা মহল বিশেষ করে নাটক-সিনেমায় নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে অত্যাচারী, নারী লোভী, মাতাল এবং আরো অনেক দোষে দোষী সাব্যস্ত করে। এবং এটাও একটা কারণ হিসেবে তুলে ধরা হয়।
তরুণ যুবক সিরাজের কিছু দোষ ত্রুটি থাকাই স্বাভাবিক, অস্বাভাবিক কিছু নয়। সত্যিকারভাবে ইতিহাসের বিচার বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, এগুলো অতিরঞ্জিত। চলুন, আমরা একটু ইতিহাসে চোখ বুলাই- সিরাজের নানা আলীবর্দী খান ইন্তেকাল করেন ১৭৫৬ খ্রিষ্টাব্দে ৯ এপ্রিল, নানার মৃত্যুর পরই তো সিরাজ উত্তরাধিকার সূত্রে ক্ষমতায় আসে। আর পলাশী যুদ্ধে সিরাজের পতন ঘটে ১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ জুন, অর্থাৎ ১৪ মাস ১৪ দিন পর।
এই ১৪ মাস ১৪ দিন, তাকে চর্তুদিকে ষড়যন্ত্রের মোকাবেলা করে টিকে থাকতে হয়েছে। কিশোর সিরাজউদ্দৌলা ক্ষমতায় বসেই এই ১৪ মাসে কমপক্ষে ১২০০ মাইল দুর্গম পথ তাকে অতিক্রম করতে হয়েছে। সে সময়ে ছিলো না কোনো উন্নত যানবাহন। করতে হয়েছে পাঁচ, পাঁচটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। চর্তুদিকে অসংখ্য ষড়যন্ত্রের মোকাবেলা করতে হয়েছে। তাকে তো আলেকজান্ডারের চেয়েও দ্রুত গতিতে পথ চলতে হয়েছে। রাত কাটাতে হয়েছে যুদ্ধক্ষেত্রে ও অশ্বপৃষ্ঠে। দিন কাটাতে হয়েছে ষড়যন্ত্রের মোকাবেলা করে।
নানাজীর উদ্যোগে সেই অল্প বয়সে বিবাহিত সিরাজের তখন আপন স্ত্রী লুৎফা, শিশু কন্যা জোহরারও প্রতি ফিরে তাকাবারও তো ফুরসত ছিল না। নাটকে আলেয়া নামের আর্য সুন্দরীদের মোহাবিষ্ট জালে রূপাকৃষ্ট পতঙ্গের মতো লাম্পট্য লীলায় সময় কাটাবার সুযোগ তিনি পেলেন কোথায়?
এগুলো আমরা একটু গভীরভাবে উপলব্ধি করলেই তো বুঝতে পারার কথা। কেবলমাত্র সিরাজের প্রতি নিষ্ঠুরতাকে ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য হতভাগ্য নবাবের চরিত্রহনন করা হয়। নানা ধরনের মিথ্যাচারের মাধ্যমে কলঙ্কিত করা হয় তরুণ নবাবকে। নিষ্ঠুরতা কত ভয়াবহ ছিলো সামান্য করে বলি।
মোহাম্মদী বেগ, মীরনের নির্দেশে সিরাজউদ্দৌলাকে হত্যা করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি। সিরাজকে হত্যার পর তার পত্নী লুৎফুন্নেসাকে চরমভাবে লাঞ্ছিত করে সে। নবাব সিরাজের সঙ্গে তিনিও ধরা পড়েছিলেন তার একমাত্র কন্যা উম্মে জোহরাসহ ১৭৫৭ সালের ২৪ জুন।
ধরা পড়ার পর লুৎফুন্নেসার ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়। মুর্শিদাবাদের জেলখানায় ধারাবাহিক নির্যাতনে তিনি মৃত প্রায় হয়ে যান। ১৭৫৮ সালে কন্যাসহ বন্দি বেগম লুৎফুন্নেসাকে ঢাকায় পাঠিয়ে বন্দি করে রাখা হয় জিঞ্জিরা প্রাসাদে। এখানে মা ও মেয়ে প্রায় আট বছর বন্দি থাকেন।
নির্লজ্জভাবে পিতা মীরজাফর ও পুত্র মীরন উভয়েই লুৎফুন্নেসাকে বিয়ে করার জন্য জোরজবরদস্তি করতে থাকে। কিন্তু এই মহীয়সী নারী উভয়ের প্রস্তাব ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করেন।
১৭৬৫ সালে তিনি মুক্তি পেয়ে কন্যাসহ মুর্শিদাবাদ ফিরে আসেন। এবং অতি দীনহীন ভাবে জীবন কাটাতে থাকেন। ১৭৯০ সালের মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি স্বামী নবাব সিরাজের কবরগাহে তসবিহ, তাহলিল, তেলাওয়াত, দোয়া, দরুদ পাঠ করেই কাটান। মুর্শিদাবাদের তৎকালীন অধিবাসীরা একজন বেগমের প্রতি নির্যাতন ও নিষ্ঠুরতা অশ্রুসিক্ত নয়নে অবলোকন করছে।
সিরাজের অনুগত, দেশপ্রেমিক সেনাপতি ও আমত্যদেরও একে একে হত্যা-নির্যাতনের শিকারে পরিণত করা হয়। ষড়যন্ত্রকারী রায়দুর্লভ বিষ প্রয়োগে হত্যা করেন অকৃত্রিম সিরাজভক্ত মোহনলালকে। খাজা আবদুল হাদি খানকে মীরজাফর মেরে ফেলেন বিশ্বাসঘাতকতা করে। সিরাজ অনুগত ঢাকার ভূতপূর্ব নায়েব রায় বল্লভ সেনকে গঙ্গার জলে ডুবিয়ে মারা হয়। পাটনার নায়েব, আরেক সিরাজ সুহৃদ, রামনারায়ণকেও খুবই নিষ্ঠুরভাবে খুন করা হয়। মোটের ওপর, পলাশীর যুদ্ধের ২০ বছরের মধ্যে প্রায় সকল সিরাজ অনুগত সেনাপতি, আমীর-ওমরাহকে সমূলে নিশ্চিহ্ন করা হয়।
একটা কথা বার বার উচ্চারিত হয়, পলাশীর ঐতিহাসিক ঘটনা থেকে আমরা শিক্ষা নিই নাই। শিক্ষা নেয়া আর না নেয়া নিয়ে আমার কিছু বলার নেই, কারণ ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নেয়া বাঙালির মজ্জাগত ব্যাপার। তাই আমি কেবল এত নির্যাতন, নিপীড়ন চালানোর কুশলীব যারা ছিলেন, তাদের কি পরিণতি হয়েছিলো তা তুলে ধরছি, এতে যদি কেউ শিক্ষা নিই আর কি। বর্তমান ও ভবিষ্যতে পর্দার আড়ালে এমন কিছু করার আগে যেন হাজার বার ভাবতে হয়।
প্রকৃতির যে একটা বিচার আছে তা আমরা পলাশীর প্রেক্ষাপট তৈরির খলনায়কদের নির্মম পরিণতি দেখে কিছুটা হলেও বুঝতে করতে পারি। সিরাজের হত্যাকারী মোহাম্মদী বেগ উন্মাদ অবস্থায় দাম্পত্য কলহে এক কূপে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে। মীরনের মৃত্যু ঘটেছিল বজ্রপাতে। তার আগে সিরাজের খালা ষড়যন্ত্রকারী ঘসেটি বেগমকে মীরণ প্রবল খরস্রোতা বুড়িগঙ্গায় নৌকা ডুবিয়ে মেরে ফেলে। মীর জাফর ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে দু’দুবার বাংলার মসনদে বসেছিলেন। কিন্তু শেষ বয়সে মারাত্মক কুষ্ঠ ব্যাধিতে তার ভবলীলা সাঙ্গ হয়।
মীর কাশিম আলী খান পরবর্তীতে বাঙলার নবাব হয়েছিলেন; কিন্তু শুরুতেই তিনি ছিলেন বাংলার মুসিলম শাসন অবসানের মূল ষড়যন্ত্রের অন্যতম সহযোগী। ভগবান গোলায় নবাবকে তিনি সর্বপ্রথম ধরিয়ে দেন তার শ্যালক মীরনের হাতে। শেষ পর্যায়ে এসে মীর কাশিম অনুধাবন করলেন একদা এই চক্রের সাথে হাত মিলিয়ে তিনি বাঙলার মুসলমানদের স্বার্থের চরম ক্ষতি সাধন করেছেন, এখন আর কোনো উপায় নেই।
মীর কাশিম বুঝলেন ঠিকই, কিন্তু ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। কিন্তু মূল ষড়যন্ত্রকারীরা কি চিরকালই পর্দার অন্তরালে থেকে যাবে?
মুঙ্গেরের দুর্গশীর্ষ থেকে বস্তায় ভরে গঙ্গার বুকে তিনি নিক্ষেপ করেন জগৎশেঠ আর রায়দুর্লভের জীবন্ত দেহ। অপর এক অপঘাতে নিহত হলো রাজা রাজ বল্লভ। পরবর্তীকালে তার সব কীর্তি পদ্মা নদী গ্রাস করে কীর্তিনাশা নামধারণ করলো।
কিন্তু এত করেও মীর কাশিম তার শেষ রক্ষা করতে পারলেন না। বক্সারের যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর ইংরেজ কর্তৃক বিতাড়িত হয়ে বনে জঙ্গলে আত্মগোপন করেই রইলেন। জঙ্গলেই তার দুই ছেলে নিহত হন। নির্বংশ মীর কাশিম আলী খান এরপর কোথায় উধাও হয়ে যান ইতিহাস সে সম্পর্কে নীরব। দীর্ঘ দিন পর তার লাশ পাওয়া যায় দিল্লির আজমেরি গেটের কাছে রাস্তার ওপরে।
ষড়যন্ত্রকারীদের ইংরেজরা প্রায়ই প্রচুর অর্থবিত্ত এবং পদক, পদবি দিয়ে তুষ্ট করত বলে জানা যায়। এ রকম এক পদক বিতরণী অনুষ্ঠানে হাজির হয়েও পদক প্রাপ্ত হিসেবে ডাক না পাওয়ায় অপমানে, ক্ষোভে সভাস্থলে উমিচাঁদের হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান। নন্দকুমার ভূষিত ছিল মহারাজা উপাধিতে কিন্তু ওয়ারেন হেস্টিংসের সাজানো মামলায় আসামি হিসেবে তাকে শেষ পর্যন্ত শেওড়া গাছে ঝুলতে হয় ফাঁসি কাষ্ঠে।
ইয়ার লতিফ নিরুদ্দেশ হয়ে গোপনে মৃত্যুবরণ করেন। রায় দুর্লভ ভগ্ন স্বাস্থ্য নিয়ে কারাগারে ধুকে ধুকে মারা গেছেন। স্ক্র্যাপ্টন বাংলায় লুটপাট করে বিলেতে ফেরার পথে জাহাজ ডুবিতে মারা যায়। ওয়াটসন কোম্পানির চাকরি থেকে বরখাস্ত হয়ে মনের দুঃখে ও অনুশোচনায় ক্রমাগত অসুস্থ হয়ে কোনো ঔষুধে প্রতিকার না পেয়ে শোচনীয়ভাবে মৃত্যু বরণ করেন।
এভাবেই দেখা যায় বাংলার মুসলমানদের স্বার্থবিরোধী ভূমিকা পালনকারীদের ইতিহাস কাউকেই ক্ষমা করেনি, চক্রান্তকারীদের ভোগ করতে হয়েছে মর্মান্তিক পরিণতি।
(উপরে উল্লেখিত ব্যক্তিদের ন্যাক্কারজনক ভূমিকা সম্পর্কে আপনার জানা না থাকলে পলাশীর আগে ও পরের বিস্তারিত ইতিহাস পড়ে নিতে পারেন, লেখার কলেবর আরও করতে চাইনি বলে তাদের বিশ্বাসঘাতকতার খতিয়ান লিখলাম না)
শেষ করি সেই প্রথম দিকের কথা দিয়ে, অবশ্য এটা সবারই জানা কথা। তাহলো, এত সৈন্য, শক্তি-সামর্থ থাকার পরেও কেন পলাশীর প্রান্তরে মুসলিমদের শোচনীয়ভাবে পরাজয় হয়েছিলো?
বিস্তারিত কথায় যাচ্ছি না, কেবল দুইটা কারণ বলেই ইতি টানবো-
এক. আমরা শত্রু চিনতে ভুল করি। মীর জাফর বারবার ষড়যন্ত্র করা সত্ত্বেও নবাব সিরাজউদ্দৌলা তাঁর উপর নির্ভরশীল হতে দেখা যায়। হয়তো নবাবের বয়স কম এবং সহজ সরল ছিলেন বলেই। তবুও আমি বলবো এটা বাঙালির মজ্জাগত স্বভাব। আমরা শত্রু চিনতে বার বার ভুল করি। বিশ্বাসঘাতকদের বার বার বিশ্বাস ভঙ্গের সুযোগ করে দিই।
দুই. এই কারণটা ইতিহাসবিদ উইলিয়াম ড্যালরিম্পল এর মুখেই শুনুন, তার লেখা নতুন বই ‘দ্য অ্যানারকি: দ্য রিলেন্টলেস রাইজ অব দ্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি’ এ নিয়ে লিখেন, “অলস বাঙালিদের জন্যই পলাশী যুদ্ধে সিরাজউদ্দৌলা হেরে গেছেন”।
এই বিষয়ে রবার্ট ক্লাইভ তার আত্মজীবনীতে লিখেছিলেন, “সে দিন স্থানীয় অধিবাসীরা ইংরেজদের প্রতিরোধ করতে চাইলে লাঠিসোটা আর হাতের ইটপাটকেল মেরেই তাদের খতম করে দিতে পারতো। কিন্তু এ দেশবাসীরা তা উপলব্ধি করতে পারেনি। যেকোনো কারণেই হোক সে দিন বাংলার মানুষ এগিয়ে যায়নি। তাদের রাজনৈতিক সচেতনতার তখন খুবই অভাব ছিল”।
আসলে আমরা বরাবরই অলস, অসচেতন, স্বার্থপর এবং নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকা জাতি। আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি, পলাশীর ট্র্যাজেডির পরেও বাংলার সাধারণ মানুষ, কৃষক সমাজ দৈনন্দিন জীবন, নিত্যদিনের মতোই মাঠে কৃষি কাজ করেছে। ফসল বুনেছে। অথচ পলাশীর যুদ্ধে গোটা জাতীয় জীবনে কি নিদারুণ ভাগ্য বিপর্যয় ঘটলো, এক ঘণ্টার প্রহসনের যুদ্ধে গোটা জাতির স্বাধীনতা হরণ করে নিয়ে গেল গোটা কয়েক বেনিয়া ইংরেজ অথচ তাদের কারো টনক নড়লো না।
টনক যখন নড়লো, তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। তাদের আর তখন কিছুই করার ছিল না। অবশ্য তার একশো বছর পর প্রথম শক্তভাবে রুখে দাঁড়াতে সক্ষম হয় বাংলার কৃষক সমাজ। যাক সেটা ভিন্ন আলাপ।
সিরাজউদ্দৌলা কখনো তার দেশের প্রজাদের সাথে কোনো অবস্থাতেই বিশ্বাসঘাতকতা করেনি। কখনো স্বেচ্ছায় স্বদেশকে বিকিয়ে দেননি। তার চরিত্রেও কোনো কালিমা ছিলো না। পলাশীর প্রান্তরে মর্মান্তিক নাট্যমঞ্চে এক মাত্র তিনি ছিলেন মূল নায়ক। সিরাজউদ্দৌলা ছিলেন বাঙলার স্বাধীনতার শেষ প্রতীক।
তথ্যসূত্র:
১. 100 Decisive Battles: From Ancient Times to the Present by Paul K. Davis (1999).
২. Ali Vardi and His Times by K. K. Datta (1939)
৩. ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে বাংলার স্বাধীনতার অবসান এবং প্রাসঙ্গিক বিষয়সমূহ -ড. মাহফুজ পারভেজ
৪. মোজাফ্ফরনামা: নবাব আলিবর্দি খান থেকে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা
৫. সিরাজের পুত্র ও বংশধরদের সন্ধানে -অমলেন্দু দে
৬. পলাশী থেকে বাংলাদেশ
৭. Sirajuddaula by Sushil Chaudhury and KM Mohsin (2012)
পোস্ট ক্রেডিটঃ Md Sayem Muhaimin
আইডিসির সাথে যোগ দিয়ে উভয় জাহানের জন্য ভালো কিছু করুন!
আইডিসি এবং আইডিসি ফাউন্ডেশনের ব্যপারে জানতে লিংক০১ ও লিংক০২ ভিজিট করুন।
আইডিসি মাদরাসার ব্যপারে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
আপনি আইডিসি মাদরাসার একজন স্থায়ী সদস্য /পার্টনার হতে চাইলে এই লিংক দেখুন.
আইডিসি এতীমখানা ও গোরাবা ফান্ডে দান করে দুনিয়া এবং আখিরাতে সফলতা অর্জন করুন।
কুরআন হাদিসের আলোকে বিভিন্ন কঠিন রোগের চিকিৎসা করাতেআইডিসি ‘র সাথে যোগাযোগ করুন।
ইসলামিক বিষয়ে জানতে এবং জানাতে এই গ্রুপে জয়েন করুন।