Dua In Helpless Situation-অসহায় অবস্থায় আল্লাহর সাহায্যের জন্য দু’আ

 

নুহ (আঃ) এর জাতি তাঁকে শুধু মিথ্যাবাদীই ভাবেনি বরং ভয় দেখিয়েছিল এবং হুমকি প্রদান করেছিল। তখন নুহ (আঃ) অসহায় হয়ে আল্লাহর কাছে প্রতিশোধের আহ্বান জানিয়েছিলেন।

 

 اَنِّیۡ مَغۡلُوۡبٌ فَانۡتَصِرۡ

 

আরবি উচ্চারণঃ আন্নী মাগ্ লুবুং ফাংতাসির

 

বাংলা অনুবাদঃ নিশ্চয় আমি অসহায়, অতএব আপনি প্ৰতিবিধান করুন। (সূরা কামার, আয়াত-১০)।

 

আল্লাহ্‌ প্রত্যাদেশ করলেন যে নুহ (আঃ) এর জাতির আর কোন লোক ঈমান আনবে না। সুতরাং তিনি যেন তাদের সম্পর্কে আর আশাবাদী না হন। তখন নুহ (আঃ) প্রার্থনা জানালেন, “হে আমার প্রতিপালক আমিতো তাদের কাছে পরাজিত, ঈমান যখন তারা আনবেই না তখন আপনি আপনার পক্ষ থেকে তাদের প্রতি প্রতিশোধ গ্রহণ করুন।

 

পবিত্র কুরআনের এ আয়াত থেকে শিক্ষা পাই যে, অসহায় অবস্থায় মহান আল্লাহর সাহায্যের জন্য আমরা এভাবে দু’আ করতে পারি।

 

 

আরও পড়ুন…

Prophets Of Islam-কুরআনে বর্নিত নবী রাসুল গনের তালিকা।

 

পৃথিবীতে কয়েক লক্ষ নবী ও রাসুলের আগমন ঘটলেও বস্তুত অল্প কিছু নবী ও রাসুলের নাম জানা যায় । এখানে বহুল পরিচিত এবং কুরআনে উল্লখিত নবী ও রাসুল গনের তালিকা নিচে দেওয়া হল।

 

হযরত আদম

আদম আল কুরআনে বর্ণিত ইসলাম ধর্মের প্রথম মানুষ এবং প্রথম নবী। আল্লাহ তার পাঁজর থেকে তার স্ত্রী হাওয়াকে সৃষ্টি করেছেন মানবজাতির মা  হিসেবে। কুরআনে আদম-এর নাম ১০টি সূরার ৫০ আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। সূরা বাকারা, সুরা আলে ইমরান, সূরা আল আরাফ, সূরা বনি ইসরাইল, সূরা কাহাফ এবং সূরা ত্ব-হা তে তার নাম, গুণাবলী ও কার্যাবলী আলোচনা করা হয়েছে। সূরা হিজর ও সূরা ছোয়াদে শুধু গুণাবলী এবং সূরা আল ইমরান, সূরা মায়িদাহ এবং সূরা ইয়াসীনে রূপক ভাবে শুধু নামের উল্লেখ আছে।

 

হযরত ইদ্রিস

ইদ্রিস যিনি মুসলমানদের নিকট হযরত ইদ্রিস (আ.) নামে পরিচিত, ইসলামী ইতিহাস অনুসারে মানবজাতির উদ্দেশ্যে প্রেরিত দ্বিতীয় নবী। তাঁর জন্মস্থান নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কারো মতে তিনি ইরাকের বাবেলে জন্মগ্রহণ করেন। আবার কারো মতে তিনি মিশরে জন্মগ্রহণ করেন।

ধারণা করা হয়, বাইবেলে উল্লেখিত ‘ইনোখ’ (Enoch) ব্যক্তিটি তিনিই। ইসলামি ভাষ্যমতে ইসলামের নবী মুহাম্মাদ সাঃ মিরাজের রাতে চতুর্থ আসমানে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। ধারণা করা হয়, তিনিই সর্বপ্রথম কলম এবং কাপড় সেলাই করার বিদ্যা আবিষ্কার করেন। বলা হয়, জ্যোতির্বিজ্ঞান,অঙ্কশাস্ত্র এবং অস্ত্রের ব্যবহারও তিনিই সর্বপ্রথম আবিষ্কার করেন।

 

হযরত নূহ

নূহ  কুরআনের বর্ণনা অনুসারে, একজন নবী ছিলেন। কুরআনে নূহ শিরোনামে একটি পূর্নাঙ্গ সূরা নাযিল হয়েছে যেখানে তার এবং সমকালীন বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে বলা হয়েছে। খ্রিস্ট ধর্মের মূল ধর্মীয় গ্রন্থ বাইবেলও তার সম্পর্কে বিশদ বিবরণ পাওয়া যায়।

 

হযরত হুদ

হুদ একজন নবীর নাম যাঁর সম্পর্কে ইসলামের মূল ধর্মগ্রন্থ কোরআন কিছু বর্ণনা রয়েছে। কোরআন-এর ১১তম সূরা হুদ তার নামে নির্দেশ করা হলেও এই সূরাটিতে তার সম্পর্কে সামান্য কিছু বর্ণনা রয়েছে। আল্লাহর গজবে ধ্বংসপ্রাপ্ত বিশ্বের প্রধান ছয়টি জাতির মধ্যে নূহ -এর পরেই হূদ -এর জাতি আদ ছিল।

হূদ ছিলেন নূহ -এরই বংশধর। আদ জাতি ও ছামূদ জাতি ছিল নূহ-এর পরবর্তী বংশধর এবং নূহের পঞ্চম অথবা অষ্টম অধস্তন পুরুষ। ইরামপুত্র ‘আদ-এর বংশধরগণ বা প্রথম ‘আদ এবং অপর পুত্রের সন্তান ছামূদ-এর বংশধরগণ দ্বিতীয় ‘আদ বলে খ্যাত। ‘আদ ও ছামূদ উভয় গোত্রই ইরাম-এর দু’টি শাখা।

সেকারণ ‘ইরাম’ কথাটি ‘আদ ও ছামূদ উভয় গোত্রের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য। এজন্য কুরআনে কোথাও ‘আদ ঊলা’ (নাজম ৫০) এবং কোথাও ‘ইরাম যাতিল ‘ইমাদ’ (ফজর ৭) শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। আদ সম্প্রদায়ের ১৩টি পরিবার বা গোত্র ছিল। আম্মান থেকে শুরু করে হাযারামাউত ও ইয়েমেন পর্যন্ত তাদের বসতি ছিল। উল্লেখ্য যে, নূহের প্লাবনের পরে এরাই সর্বপ্রথম মূর্তিপূজা শুরু করে।

 

হযরত সালেহ

সালেহ (আ:) (আরবি: صالح‎) কুরআনের বর্ণনা অনুসারে, তিনি ছিলেন একজন নবী। যাকে ‘সামূদ জাতির’ উদ্দেশ্যে আল্লাহ প্রেরণ করা হয়েছিল। তারা নূহ (আ.)এর পুত্র সামের বংশধর এবং প্রাচীন আরব জাতিসমূহের একটি। কুরআনে মোট আট জায়গায় সালেহ এর আলোচনা করা হয়েছে।আ’রাফঃ ৭৩, ৭৫, ৭৭; হূদঃঃ ৬১, ৬২, ৬৬, ৮৯; শুআ’রাঃ ১৪২।

আর সালেহ এর সম্প্রদায় সামূদ জাতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে কুরআনের নয়টি সূরার মাঝে। যথাঃ আল আরাফ, হুদ, আল হিজর, আন নম্‌ল, আল মুরসালাত, আন-নাজম, আল কামার, আল হাক্কাহ, আশ-শাম্‌স।

 

হযরত ইব্রাহীম

ইব্রাহিম বা ইব্রাহীম, সম্মানার্থে হযরত ইব্রাহিম (আ.) (আরবি: ابراهيم‎‎,‎)। আনুমানিক জন্ম: ১৯০০ খৃষ্ট পূর্বাব্দ থেকে ১৮৬১ খৃষ্ট পূর্বাব্দে হযরত ইবরাহীম (আঃ) পশ্চিম ইরাকের বসরার নিকটবর্তী ‘বাবেল’ শহরে জন্মগ্রহণ করেন৷ – মৃত্যু: ১৮১৪ খৃষ্ট পূর্বাব্দ থেকে ১৭১৬ খৃষ্টপূর্বাব্দ), ইসলাম ধর্মের একজন গুরুত্বপূর্ণ নবী ও রাসূল।

 পবিত্র কুরআনে তার নামে একটি সূরাও রয়েছে। পুরো কুরআনে অনেকবার তার নাম উল্লেখিত হয়েছে। ইসলাম ধর্মমতে, তিনি মুসলিম জাতির পিতা। ইসলাম ছাড়াও, ইহুদি ও খ্রিস্টধর্মেও ইব্রাহিম শ্রদ্ধাস্পদ ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছেন। এজন্য ইবরাহিমকে সেমেটিক ধর্মগুলোর জনকও বলা হয়ে থাকে।

সৃষ্টিকর্তার প্রতি তার দৃঢ় বিশ্বাসের ছিলো ইসলামে তার কার্যক্রম কে স্মরণ করে ঈদুল আযহা পালিত হয়। ইব্রাহিম ও তার শিশুপুত্র ইসমাইল ইসলামে কুরবানি ও হজ্জের বিধান চালু করেন যা বর্তমানের মুসলিমদের দ্বারাও পালিত হয়।

তার পিতার নাম আযর। তার স্ত্রীর নাম সারাহ ও হাজেরা। তার চার পুত্র ছিলেন: ইসমাইল (ইংরেজি: Ishmael), ইসহাক (ইংরেজি: Isaac)। মতান্তরে, তার ৬-১২জন পুত্র ছিলেন। তবে, পুত্র হিসেবে কেবল ইসমাইল ও ইসহাকের বর্ণনাটিই ইতিহাসে প্রসিদ্ধ। অন্যদের ব্যাপারে ঐতিহাসিক উল্লেখের তেমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না।

 

হযরত ইসমাইল

ইসমাইল (আরবি: إسماعيل) কুরআন এবং বাইবেলে উল্লেখিত এক ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব। মুসলমানরা বিশ্বাস করে যে, তিনি একজন নবী, এবং তাঁর সম্মানার্থে তাঁর নামোচ্চারণের সাথে ‘আলাইহিসসালাম’ (সংক্ষেপে আ.) বা ‘শান্তি বর্ষিত হোক’ উচ্চারণ করা উচিত।

তিনি ইব্রাহিম-এর সর্বপ্রথম সন্তান এবং ইব্রাহিমের স্ত্রী হাজেরার গর্ভে তার জন্ম। বাইবেলের বর্ণনামতে তিনি ১৩৭ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। ইসমাঈলের পিতা ইব্রাহীমকে আল্লাহ বলেছিলেন, “তোমার সবচাইতে প্রিয় বস্তু আল্লাহর রাস্তায় কুরবাণী করো”;

তখন তিনি একে একে দুম্বা, উট ইত্যাদি কুরবাণী করার পরও যখন দেখলেন আল্লাহর পক্ষ থেকে সেই একই বাণী আসছে, তখন তিনি তাঁর স্বীয় পুত্র ইসমাইলকে কুরবাণী দেওয়ার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করলেন, ঠিক তখনই আল্লাহর পক্ষ থেকে ফেরেশতার মাধ্যমে ইব্রাহীমকে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ঘোষণা করলেন এবং পুত্র ইসমাইলের স্থলে দুম্বা শুইয়ে দিলেন, আর তখন থেকেই মুসলমানদের ওপর নির্দিষ্ট নিসাব অনুযায়ী বৎসরে একবার উট, দুম্বা, গরু ইত্যাদি কুরবাণী করা ওয়াজিব হয়ে যায়।

 

হযরত লূত

লুত ইবনে হারুন (আ.) ( لوط, Lūṭ ), যিনি হযরত লুত (আঃ) নামে অভিহিত, বাইবেল এবং কুরআনে উল্লেখিত আল্লাহ প্রেরিত একজন পয়গম্বর যাকে সদোম ও গোমোরাহ নামক শহরদ্বয়ের অধিবাসীদের নবী হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছিল। তিনি ছিলেন নবী ইব্রাহীমের আপন ভাতিজা।

ইব্রাহীম (আঃ) এর সঙ্গে তিনি কেনানে চলে আসেন। সেখানেই তার উপর নবুয়াতের দায়িত্ব অবতীর্ণ হয়। সমকামিতায় লিপ্ত থাকা স্বীয় জাতির সতর্ককারী হিসেবে আল্লাহ তাআলা হযরত লুত (আঃ) নিয়োজিত করেছিলেন। সমকামিতা ত্যাগ না করায় তারা আল্লাহর আযাবে সমূলে ধ্বংস হয়েছিলো।

 

হযরত ইসহাক

ইসহাক (আরবি: إسحاق‎‎ অথবা إسحٰق ছিলেন ইসলামের একজন নবী। ইহুদী, খ্রিস্ট এবং ইসলাম ধর্মমতে ইব্রাহিম (আঃ) তার স্ত্রী সারার নিকট থেকে এই পুত্র লাভ করেন।

ইসলাম ধর্মানুসারে ইসহাক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তি হিসাবে চিহ্নিত; কারণ তিনি ও তার বড় সৎভাই ইসমাইল তাদের পিতা ইব্রাহিমের মৃত্যুর পর আল্লাহর বার্তা প্রচার করেন এবং ইসলামের উত্তরাধিকার অব্যাহত রাখেন।তিনি কোরআন-এ মোট পনেরো বার বর্ণিত হয়েছেন; কখনও তার পিতা ইব্রাহিম-এর সাথে, আবার কখনও তার পুত্র ইয়াকুব-এর সাথে।

 

হযরত ইয়াকুব

হযরত ইয়াকুব (আ.) ইংরেজি ভাষায়: Jacob;  আরবি ভাষায়: يَعْقُوب), ইসরাঈল নামেও পরিচিত। কোরআনের বর্ণনা অনুসারে, তিনি ছিলেন একজন নবী। তার গোত্রের নাম ছিল বনী-ইসরাঈল।

এই নামে কোরআনে একটি সূরা নাযিল হয়েছে। তার বার জন পুত্র-সন্তানের কথা কোরাআনে উল্লেখ করা হয়েছে এবং হিব্রু বাইবেলে বার জন পুত্র-সন্তান ও কয়েক জন কন্যা সন্তানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মেয়েদের মধ্যে শুধু একজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের প্রত্যেকেরই সন্তান-সম্ভতি হয় এবং বংশ বিস্তার লাভ করে। হিব্রু বাইবেল অনুসারে তাদের নাম হলঃ রেউবেন, সিমোন, লেভি, জুদাহ, দান, নাফতালি, গাদ, আশের, ইসসাচার, জেবুলুন,

মেয়ে দিনাহ, জোসেফ বা ইউসুফ, এবং বেনজামিন বা বেনিয়ামিন। তার উপাধি ছিল ইসরাঈল । তাই বারটি পরিবার সবাই বনী-ইসরাঈল নামে খ্যাত হয়। বারপুত্রের মধ্যে দশ জন জ্যেষ্ঠপুত্র ইয়াকুব (আঃ) এর প্রথমা স্ত্রী “লাইয়্যা বিন্‌তে লাইয়্যানের” গর্ভে জন্মলাভ করে। তার মৃত্যুর পর ইয়াকুব (আঃ) লাইয়্যার ভগিনী “রাহীলকে” বিবাহ করেন।

রাহীলের গর্ভে দু’পুত্র ইউসুফ ও বেনিয়ামিন জন্মগ্রহণ করেন। তাই ইউসুফ (আঃ) এর একমাত্র সহোদর ভাই ছিলেন বেনিয়ামিন এবং অবশিষ্ট দশ জন বৈমাত্রেয় ভাই ও কয়েক জন বোন। ইউসুফ জননী রাহীলও বেনিয়ামিনের জন্মের পর মৃত্যুমুখে পতিত হন।

 

হযরত ইউসুফ

হযরত ইউসুফ (আঃ) (ইংরেজি: Joseph অথবা Yosef,  আরবি: يوسف, Yusuf)। ইহুদি, খ্রিস্ট, এবং ইসলাম ধর্মে স্বীকৃত একজন পয়গম্বর। কোরআন এবং হিব্রু বাইবেলের বর্ণনা অনুসারে, তিনি হযরত ইয়াকুব (আ.) এর বারো ছেলের ১১তম ছেলে। তিনি স্বপ্নের ব্যাখ্যা দিতে জানতেন। হিব্রু বাইবেল এবং কোরআনের বিভিন্ন স্থানে ইউসুফ (আঃ) নাম উল্লেখ করা হয়েছে, কিন্তু শুধু কোরআনের সূরা ইউসুফে তার ঘটনা সম্পূর্ণ ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।

ইউসুফের ঈর্ষান্বিত ভাইরা তাকে একটি কাফেলার দলের কাছে কম মূল্যে বিক্রি করে দেয়, পরবর্তীতে তিনি মিশরের বাদশাহর পরে দ্বিতীয় ক্ষমতাশালী ব্যক্তি হন। 

 

হযরত আইয়ুব

আইয়ুব (আরবি: أيّوب ‎‎) ইসলামে একজন নবী হিসেবে গণ্য এবং মুসলমানদের পবিত্র গ্রন্থ কোরআনে তার উল্লেখ রয়েছে। ইবনে কাছীরের বর্ণনা অনুযায়ী তিনি নবী ইসহাক এর দুই জমজ পুত্র ঈছ ও ইয়াকূবের মধ্যে পুত্র ঈছ-এর প্রপৌত্র ছিলেন। আর তার স্ত্রী ছিলেন ইয়াকূব-পুত্র নবী ইউসুফ-এর পৌত্রী ‘লাইয়া’ বিনতে ইফরাঈম বিন ইউসুফ।

বিপদে ধৈর্য ধারণ করায় এবং আল্লাহর পরীক্ষাকে হাসিমুখে বরণ করে নেওয়ায় আল্লাহ কোরআন শরীফে আইয়ূবকে ‘ধৈর্যশীল’ ও ‘সুন্দর বান্দা’ হিসাবে প্রশংসা করেছেন। আবু হুরায়রা কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, আইয়ূব একদিন নগ্নাবস্থায় গোসল করছিলেন। এমন সময় তাঁর উপরে সোনার টিড্ডি পাখির দল এসে পড়ে। তখন আইয়ূব সেগুলিকে ধরে কাপড়ে ভরতে থাকেন।

এমতাবস্থায় আল্লাহ তাকে ডেকে বলেন, হে আইয়ূব! (أَلَمْ اَكُنْ أُغْنِيَنَّكَ عَمَّا تَرَى؟) আমি কি তোমাকে এসব থেকে মুখাপেক্ষীহীন করিনি? আইয়ূব বললেন, (بَلَى وَعِزَّتِكَ ولكن لاغِنَى بِى عَنْ بَرَكَتِكَ) তোমার ইজ্জতের কসম! অবশ্যই তুমি আমাকে তা দিয়েছ। কিন্তু তোমার বরকত থেকে আমি মুখাপেক্ষীহীন নই’।

 

হযরত শুয়াইব

শুয়াইব বা শু’য়াইব, বা, শোয়াএব (আরবি: شعيب‎‎, শুআইব শব্দটি মূলত শা’ব শব্দের ক্ষুদ্রত্ববাচক শব্দ। আল-কোরআনে তার নাম মোট ১১ বার উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি ইব্রাহিমের (আঃ) পরবর্তীকালে বলে ধারণা করা হয় এবং মুসলমানদের বিশ্বাস তাকে ‘মাদিয়ান’ নামক একটি সম্প্রদায়ের নিকট প্রেরণ করা হয়েছিল। যারা একটি বড় গাছকে পূজা করত বলে ‘বৃক্ষ-মানব’ হিসাবে পরিচিত ছিল।

 

হযরত মুসা

হযরত মূসা (আঃ)’ (ইংরেজি: Moses, আরবি: موسى, ইহুদি, খ্রিস্ট, এবং ইসলাম ধর্মে স্বীকৃত রাসুল । তিনি মোজেস নামেও পরিচিত ছিলেন। কোরআনে মুসা (আঃ) নাম অন্য নবীদের তুলনায় বেশি উল্লেখ করা হয়েছে। ধারণা করা হয় যে মুসা (আ.) ১২০ বছর বেচে ছিলেন। হযরত মুসা (আঃ) এর সম্প্রদায়ের নাম ছিল বনী-ইসরাঈল। বলা হয়, তার মুজিযাসমূহ বিগত অন্যান্য নবী-রসূলগণের তুলনায় সংখ্যায় বেশি, প্রকাশের বলিষ্ঠতার দিক দিয়েও অধিক।

 

হযরত হারুন

হারুন (আঃ)-হারুন (আরবি: هارون, হারুন) যেখানে আল্লাহর নবী হিসাবে কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে । কুরআনে বারবার হারুন (আঃ) এর প্রশংসায় আহ্বান করেছে একজন “মুমিন বান্দা” হিসাবে। হারুন (আঃ) ছিলেন মুসা (আঃ) এর ভাই। আল্লাহই তাকে মুসা (আঃ) সাথে র্ধম প্রচারের জন্য মনোনিত করেছিলেন।

 

হযরত দাউদ

হযরত দাউদ (আঃ)- ডেভিড বা দাউদ; আরবি: داوُود‎ ; বাইবেলের বর্ণনা অনুসারে, তিনি ছিলেন একজন ইসরাঈল রাজতন্ত্রের দ্বিতীয় রাজা এবং  যীশুর পুর্বপুরুষ ইয়াকুবের পুত্র, ইয়াহুদার অধস্তন বংশধর। তার পিতার নাম ঈসা। অনেক পুত্র সন্তানের মধ্যে দাউদ ছিলেন পিতার কনিষ্ঠ সন্তান।

 

হযরত সুলায়মান

সুলায়মান(আঃ)- সুলায়মান (আঃ), আরবি ভাষায়: سليمان সুলায়মান। কুরআনের বর্ণনা অনুসারে, তিনি ছিলেন একজন নবী এবং প্রতাবশালী বাদশাহ্‌। হিব্রু বাইবেলের অনুসারে, তিনি ছিলেন ইসরায়েলের প্রথম এবং গুরুত্বপূর্ণ একজন রাজ়া। তার জন্ম আনুমানিক ১০১১ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে এবং মৃত্যু আনুমানিক ৯৩১ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে ; এবং তার রাজত্ব কাল ছিল প্রায় ৯৭০ থেকে ৯৩০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত স্থায়ী।

তিনি ছিলেন হযরত দাউদ (আঃ)-এর পুত্র। কথিত আছে, হজরত সুলায়মান (আ.) জেরুজালেম নগরী প্রতিষ্ঠা করেন এবং আল্লাহ তাআলার মহিমা তুলে ধরতে সেখানে পুনর্নির্মাণ করে গড়ে তোলেন মুসলমানদের প্রথম কিবলা আল-আকসা মসজিদ।

 

হযরত যাকারিয়া

হযরত যাকারিয়া (আঃ)- (আরবি: زكريا যাকারিয়া; তিনি ইসলামের একজন নবী এবং তিনি মরিয়মের অভিভাবক হয়েছিলেন। তিনি ইয়াহিয়া (আঃ) এর বাবা ছিলেন। কিছু মুসলমানদের বিশ্বাস জাকারিয়া শহীদ হয়েছিলেন।

যাকারিয়া (আ.) সম্পর্কে কুরআনে কেবল এতটুকু বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি মারিয়ামের লালন-পালনকারী ছিলেন। এ বিষয়ে আল্লাহ সূরা আলে-ইমরানে যা বলেন, তার সার-সংক্ষেপ এই যে, ইমরানের স্ত্রী মানত করেছিলেন যে, আমার গর্ভের সন্তানকে আমি আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করে দিলাম।

তিনি ধারণা করেছিলেন যে, তার একটি পুত্র সন্তান হবে এবং তাকে তিনি আল্লাহর ঘর বায়তুল মুক্বাদ্দাসের খিদমতে নিয়োগ করবেন। কিন্তু পুত্রের স্থলে কন্যা সন্তান অর্থাৎ মারিয়াম জন্মগ্রহণ করলে তিনি হতাশ হয়ে পড়েন। আল্লাহ তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, لَيْسَ الذَّكَرُ كَالأُنْثَى ‘এই কন্যার মত কোন পুত্রই নেই’ (আলে-ইমরান ৩/৩৬)।

 

হযরত ইলিয়াস

হযরত ইলিয়াস (আ.)- আরবি: إيلياس إليا, (ইলিয়াস)  একজন নবী ছিলেন। ইস্রায়েলের উত্তর রাজ্যে বা’ল, এলাকায় ছিল তাঁর বসবাস।

 

হযরত ইয়াহিয়া

হযরত ইয়াহিয়া(আ.)- আরবি: يحيى‎ । তিনি ছিলেন একজন নবী। সূরা মারইয়ামে হযরত ইয়াহিয়া (আ:) কথা বলা হয়েছে। যাকারিয়া (আঃ) ও ইয়াহইয়া (আঃ) সুলায়মান (আঃ) পরবর্তী দুই নবী, যারা পরস্পরের পিতা-পুত্র ছিলেন এবং বায়তুল মুক্বাদ্দাসের অধিবাসী ছিলেন। ইয়াহইয়া ছিলেন পরবর্তী নবী ঈসা (আঃ)-এর আপন খালাতো ভাই এবং বয়সে ছয় মাসের বড়। তিনি ঈসা (আঃ) এর ছয় মাস পূর্বেই দাওয়াতের কাজ শুরু করেন।

 

হযরত ইয়াসা

হযরত আল-ইয়াসা (আ.)- পবিত্র কুরআনে এই নবী সম্পর্কে সূরা আন‘আম ৮৬ ও সূরা ছোয়াদ ৪৮ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে অন্য নবীগণের নামের সাথে। সূরা আন‘আম ৮৩ হ’তে ৮৬ আয়াত পর্যন্ত ইলিয়াস ও আল-ইয়াসা‘ সহ ১৭ জন নবীর নামের শেষদিকে বলা হয়েছে- وَإِسْمَاعِيْلَ وَالْيَسَعَ وَيُونُسَ وَلُوْطاً وَكُلاًّ فضَّلْنَا عَلَى الْعَالَمِيْنَ- (الأنعام ৮৬)- ‘ইসমাঈল, আল-ইয়াসা‘, ইউনুস, লূত্ব তাদের প্রত্যেককেই আমরা বিশ্বের উপরে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি’ (আন‘আম ৬/৮৬)।

অন্যত্র আল্লাহ বলেন, وَاذْكُرْ إِسْمَاعِيلَ وَالْيَسَعَ وَذَا الْكِفْلِ وَكُلٌّ مِّنَ الْأَخْيَارِ- (ص ৪৮)- ‘আর তুমি বর্ণনা কর ইসমাঈল, আল-ইয়াসা‘ ও যুল-কিফলের কথা। তারা সকলেই ছিল শ্রেষ্ঠগণের অন্তর্ভুক্ত’ (ছোয়াদ ৩৮/৪৮)। তিনি ইফরাঈম বিন ইউসুফ বিন ইয়াকূব-এর বংশধর ছিলেন। হযরত ইলিয়াস (আ.) সুলায়মান (আঃ) পরবর্তী পথভ্রষ্ট বনু ইস্রাঈলগণের প্রতি প্রেরিত হয়েছিলেন। তার পরে আল-ইয়াসা‘ নবী হন এবং তিনি ইলিয়াস (আ.)-এর শরী‘আত অনুযায়ী ফিলিস্তীন অঞ্চলে জনগণকে পরিচালিত করেন ও তাওহীদের দাওয়াত অব্যাহত রাখেন।

 

হযরত যুল কিফল

হযরত যুল-কিফ’ল (আঃ)-

পবিত্র কুরআনে কেবল সূরা আম্বিয়া ৮৫-৮৬ ও ছোয়াদ ৪৮ আয়াতে যুল-কিফলের নাম এসেছে। তিনি আল-ইয়াসা‘ (আঃ) -এর পরে নবী হন এবং ফিলিস্তীন অঞ্চলে বনু ইস্রাঈলগণের মধ্যে তাওহীদের দাওয়াত দেন। আল্লাহ বলেন, وَإِسْمَاعِيْلَ وَإِدْرِيْسَ وَذَا الْكِفْلِ كُلٌّ مِّنَ الصَّابِرِيْنَ- وَأَدْخَلْنَاهُمْ فِيْ رَحْمَتِنَا إِنَّهُمْ مِنَ الصَّالِحِيْنَ- (الأنبياء ৮৫-৮৬)- ‘আর তুমি স্মরণ কর ইসমাঈল, ইদরীস ও যুল-কিফলের কথা। তারা প্রত্যেকেই ছিল ছবরকারী’। ‘আমরা তাদেরকে আমাদের রহমতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত করেছিলাম। তারা ছিল সৎকর্মশীলগণের অন্তর্ভুক্ত’ (আম্বিয়া ২১/৮৫-৮৬)।

 

হযরত ইউনুস

হযরত ইউনুস(আ.)- আরবি:يونس, ইউনুস আথবা يونان,।  কুরআনের বর্ণনা অনুসারে, তিনি ছিলেন একজন নবী। যাকে ‘নীনাওয়া’ বাসীদেরকে হিদায়াতের জন্য আল্লাহ প্রেরণ করেন। কুরআনে বলা হয়েছে, وَإِنَّ يُونُسَ لَمِنَ الْمُرْسَلِيْنَ- إِذْ أَبَقَ إِلَى الْفُلْكِ الْمَشْحُوْنِ- فَسَاهَمَ فَكَانَ مِنَ الْمُدْحَضِيْنَ- فَالْتَقَمَهُ الْحُوْتُ وَهُوَ مُلِيْمٌ- (الصافات ১৩৯-১৪২)- ‘আর ইউনুস ছিল পয়গম্বরগণের একজন’। ‘যখন সে পালিয়ে যাত্রী বোঝাই নৌকায় গিয়ে পৌঁছল’। ‘অতঃপর লটারীতে সে অকৃতকার্য হ’ল’। ‘অতঃপর একটি মাছ তাঁকে গিলে ফেলল। এমতাবস্থায় সে ছিল নিজেকে ধিক্কার দানকারী’ (ছাফফাত ৩৭/১৩৯-১৪২)।

 

হযরত ঈসা (আ.)

হযরত ঈসা (আ.)- ঈসা ইবনে মারিয়াম ( আরবি: عيسى), যিনি নিউ টেস্টামেন্টে যিশু নামে পরিচিত, ইসলাম ধর্মে একজন নবী ও রাসূল এবং মসীহ হিসেবে স্বীকৃত।

খ্রিস্টধর্মের মত ইসলাম ধর্মেও তিনি সম্মানিত একজন নবী; তবে ইসলাম ধর্মে তার ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার ঘটনাকে স্বীকার করা হয় না। বলা হয় যে, ক্রুশবিদ্ধ করার জন্য যখন বাহক তাকে নিতে ঘরে প্রবেশ করে তখনই আল্লাহ তাকে উপরে তুলে নেন এবং বাহকের চেহারাকে ঈসা-এর চেহারার অনুরুপ করে দেন; ফলে ঈসা মনে করে ঐ বাহককে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়। ইসলাম বলে যে, ঈসা বর্তমানে জীবিত অবস্থায় আসমানে অবস্থান করছেন।

কেয়ামতের পূর্বে মসীহ দাজ্জালের আবির্ভাবের পর ঈসা নবী মুহাম্মদ-এর একজন উম্মত বা অনুসারী হিসেবে পুনরায় পৃথিবীতে অবতরণ করবেন এবং দাজ্জালকে হত্যা করবেন। এরপর সমস্ত পৃথিবীর শাসনভার গ্রহণ করবেন এবং পৃথিবীতে শান্তি ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করবেন। সবশেষে তিনি একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে মৃত্যুবরণ করবেন এবং মুহাম্মদ (সাঃ) এর কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হবে; যে কারণে মদীনায় নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর কবরের পাশে তাকে কবর দেয়ার জায়গা প্রস্তুত করে রাখা হয়েছিল যা এখনও বহাল আছে।

 

হযরত মুহাম্মাদ(সা.)

হযরত মুহাম্মাদ (সা.)- ৫৭০ খ্রিঃ ১২ রবিউল আউয়াল মুহাম্মদ (সাঃ) আরবের বিখ্যাত কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পূর্ণ নামঃ আবু আল-কাশিম মুহাম্মাদ ইবনে ʿআবদুল্লাহ ইবনে ʿআব্দুল মুত্তালিব ইবনে হাশিম (ابو القاسم محمد ابن عبد الله ابن عبد المطلب ابن هاشم)। আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত সর্বশেষ নবী। (আরবি: النبي আন-নাবিয়্যু‎) তথা “বার্তাবাহক” (আরবি : الرسول আর-রাসুল) যার উপর ইসলামী প্রধান ধর্মগ্রন্থ আল-কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। তিনি ছিলেন বনি আদমের শ্রেষ্ঠ বংশের সন্তান। অমুসলিমদের মতে তিনি ইসলামী জীবন ব্যবস্থার প্রবর্তক।

অধিকাংশ ইতিহাসবেত্তা ও বিশেষজ্ঞদের মতে মুহাম্মাদ (সাঃ) ছিলেন পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় নেতা। তার এই বিশেষত্বের অন্যতম কারণ হচ্ছে আধ্যাত্মিক ও জাগতিক উভয় জগতেই চূড়ান্ত সফলতা অর্জন।

তিনি ধর্মীয় জীবনে যেমন সফল তেমনই রাজনৈতিক জীবনেও। সমগ্র আরব বিশ্বের জাগরণের পথিকৃৎ হিসেবে তিনি অগ্রগণ্য; বিবাদমান আরব জনতাকে একীভূতকরণ তার জীবনের অন্যতম সফলতা। তিনি চেয়েছিলেন সব মানুষ পৃথিবীতে শুধুমাত্র এক আল্লাহর উপাসনা করবে। তিনি এই বার্তা নিয়ে পৃথিবীতে এসেছিলেন।

 

আইডিসির সাথে যোগ দিয়ে উভয় জাহানের জন্য ভালো কিছু করুন!

 

আইডিসি এবং আইডিসি ফাউন্ডেশনের ব্যপারে  জানতে  লিংক০১ ও লিংক০২ ভিজিট করুন।

আইডিসি  মাদরাসার ব্যপারে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। 

আপনি আইডিসি  মাদরাসার একজন স্থায়ী সদস্য /পার্টনার হতে চাইলে এই লিংক দেখুন.

আইডিসি এতীমখানা ও গোরাবা ফান্ডে দান করে  দুনিয়া এবং আখিরাতে সফলতা অর্জন করুন।

কুরআন হাদিসের আলোকে বিভিন্ন কঠিন রোগের চিকিৎসা করাতেআইডিসি ‘র সাথে যোগাযোগ করুন।

ইসলামিক বিষয়ে জানতে এবং জানাতে এই গ্রুপে জয়েন করুন।