Congregational Prayer-জামাতে সালাত আদায়ের আবশ্যকতা

প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না

অনুবাদ : সিরাজুল ইসলাম আলী আকবর সম্পাদনা : আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান

জামাতে সালাত আদায়ের আবশ্যকতা

عَنْ أبِيْ هُرَيْرَةَ – رَضِيَ اللهُ عَنْهُ – قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، إنَّ أثْقَلَ صَلَاةٍ عَلَى المُنَافِقِينَ صَلَاةُ الْعِشَاءِ وَ صَلَاةُ الفَجْرِ، وَلَوْ يَعْلَمُوْنَ مَا فِيْهِمَا لَأتَوْهُمَا وَلَوْ حَبْوًا، وَلَقَدْ هَمَمْتُ أنْ آمُرَ بِالصَّلاةِ فَتُقَامَ، ثُم آمُرَرَجُلاً فَيُصَلِّي بِالنَّا سِ، ثُمَّ أنْطَلِقُ مَعِيَ بِرِجَالٍ مَعَهُمْ حَزَمٌ مِنْ حَطَبٍ إلَى قَوْمٍ لَا يَشْهَدُوْنَ الصَّلَاةَ فَأحْرِقَ عَلَيْهِمْ بُيُوْتَهُمْ بِالنَّارِ. (متفق عليه)

আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সা. বলেছেন—মুনাফিকদের নিকট সর্বাধিক কঠিন ও ভারী সালাত হচ্ছে এশা ও ফজরের সালাত। তাতে কি কল্যাণ ও সওয়াব নিহিত আছে, যদি তারা সে সম্পর্কে জানত, তবে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তারা তাতে অংশগ্রহণ করত।

কখনো কখনো আমার ইচ্ছা জাগে যে আমি সালাত আদায়ের নির্দেশ প্রদান করি, এবং তা কায়েম করা হয়, অত:পর এক ব্যক্তিকে আদেশ প্রদান করি, সে মানুষকে নিয়ে সালাত আদায় করবে ; আমি একদল লোক নিয়ে বের হব, যাদের সাথে থাকবে লাকড়ির বোঝা। আমরা খুঁজে বের করব এমন লোকদের, যারা উপস্থিত হয়নি সালাতে। আমরা তাদেরসহ তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেব।[1]

শব্দ প্রসঙ্গে আলোচনা : أثْقَلَ صَلَاةٍ : أثقل : শব্দটি নির্গত الثقل হতে। আধিক্যজ্ঞাপক বিশেষ্য। অর্থ : ভারী, কষ্টকর। عَلَى المُنَافِقِينَ : অভিধানে নিফাকের মৌলিক অর্থ গোপন করা, ঢাকা। এ নামে নামকরণ করার কারণ এই যে, প্রকাশ্যে ঈমান প্রচার করলেও তার অন্তরের আড়ালে থাকে গোপন কুফর ও অবিশ্বাস।

এখানে মুনাফিক দ্বারা উদ্দেশ্য—যারা প্রকাশ্যে ইসলামকে আপন ধর্ম হিসেবে প্রচার করে এবং মনে লুকিয়ে রাখে কুফর ও অবিশ্বাস। وَلَوْ يَعْلَمُوْنَ مَا فِيْهِمَا : অর্থাৎ, এ দুই সালাতের ফজিলত ও প্রাচুর্য বিষয়ে যদি তারা অবগত হত…। لَأتَوْهُمَا : অর্থাৎ, দু সালাতে উপস্থিত হত।
তারা মসজিদে এসে জামাতের সাথে সালাতে অংশগ্রহণ করত। وَلَوْ حَبْوًا : অর্থাৎ, হাঁটার ক্ষেত্রে কোন প্রতিবন্ধকতা থাকলে তারা বুকে হামাগুড়ি দিয়ে উপস্থিত হত। আল্লামা নববী রহ. বলেন, যদি তারা এ উভয় সালাতের ফজিলত ও পরোকালিক পুরস্কারের ব্যাপারে অবগত হত, এবং কোন কারণে হামাগুড়ি ব্যতীত তাতে উপস্থিত হতে অপারগ হত, তবে তারা অবশ্যই হামাগুড়ি দিয়ে তাতে উপস্থিত হত এবং জামাত ত্যাগ বরদাশত করত না।

وَلَقَدْ هَمَمْتُ : الهم মানে প্রত্যয়, দৃঢ় ইচ্ছা পোষণ। কেউ কেউ বলেন, এর মানে দৃঢ় ইচ্ছার তুলনায় কিছুটা নিম্নস্তরের ইচ্ছাশক্তি প্রকাশ করা। আহকাম ও ফায়দা :

  • ফরজ সালাত মসজিদে আদায় আবশ্যক হওয়ার মৌলিক প্রমাণ হাদিসটি। কারণ রাসূল সা. উক্ত হাদিসে শরিয়ত সম্মত ওজর ব্যতীত জামাতে সালাত ত্যাগকারীর জন্য আগুনের শাস্তির উল্লেখ করেছেন। অন্যান্য যে সকল নির্দেশ ও কোরআন-হাদিসের দলিল বিষয়টিকে আরো জোড়াল ও দৃঢ় করে, নিম্নে তা উল্লেখ করা হল—

عن أبي هريرة -رضي الله عنه- قال أتي النبي صلي الله عليه وسلم رجل أعمى، فقال: يا رسول الله، إنه ليس لي قائد يقودني إلي المسجد، فسأل رسول الله صلي الله عليه وسلم أن يرخص له فيصلي في بيته، فرخص له، فلما ولي دعاه، فقال: هل تسمع النداء بالصلاة ؟ قال: نعم قال: فأجب.رواه مسلم: 1044

আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূল সা.-এর নিকট এক অন্ধ ব্যক্তি উপস্থিত হল। বলল, হে আল্লাহর রাসূল ! আমাকে মসজিদে উপস্থিত করার মত কেউ নেই—এই বলে সে রাসূলের নিকট গৃহে সালাত আদায়ের অনুমতি প্রার্থনা করল।

রাসূল তাকে অনুমতি দিলেন। সে বের হয়ে পড়লে তিনি তাকে ডেকে বললেন, তুমি কি আজান শুনতে পাও ? সে উত্তর দিল, হ্যা। তিনি বললেন, তবে তুমি আজানের ডাকে সাড়া প্রদান করো।[2]

  • আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন—

لقد رأيتنا وما يتخلف عن الصلاة إلا منافق قد علم نفاقه أو مريض، إن كان المريض ليمشي بين رجلين حتى يأتي الصلاة. رواه مسلم 1045 আমি আমাদের দেখেছি এমন মুনাফিক ব্যতীত কেউ জামাতে সালাত আদায় বর্জন করত না, যার নেফাক সম্পর্কে সকলে অবগত হয়ে গিয়েছে কিংবা যে অসুস্থ—এমনকি প্রবল অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তিও দুই ব্যক্তির কাঁধে ভর দিয়ে সালাতে উপস্থিত হত।[3]

  • জামাতে সালাত আদায়ের রয়েছে প্রভূত ফজিলত ও অসংখ্য সওয়াব। এ প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে যে, রাসূল সা. বলেছেন—

صلاة الرجل في الجماعة تضعف علي صلاته في بيته وفي سوقه خمسا وعشرين ضعفا، وذلك أنه إذا توضأ فأحسن الوضوء ثم خرج إلي المسجد لا يخرجه إلا الصلاة لم يخط خطوة إلا رفعت له به درجة، وحط عنه به خطيئة، فإذا صلي لم تزل الملائكة تصلي عليه ما دام في مصلاه، اللهم صل عليه، اللهم ارحمه، ولا يزال أحدكم في صلاة ما انتظر الصلاة. رواه مسلم: 611

ব্যক্তির জামাতে সালাত আদায় তার গৃহে একাকী কিংবা বাজারে সালাত আদায়ের তুলনায় পঁচিশ গুণ বেশি সওয়াব বয়ে আনে। কারণ সে যখন উত্তমরূপে ওজু করে কেবল মসজিদের উদ্দেশ্যে বের হয়, তখন প্রতি পদক্ষেপে একটি করে তার দরজা (মর্যাদা) বুলন্দ হয়, এবং ক্ষালণ হয় একটি করে পাপ।

সালাত শেষে যতক্ষণ সে সালাতের স্থানে অবস্থান করে, ততক্ষণ ফেরেশতাগণ তার জন্য রহমতের দোয়া করতে থাকেন—আল্লাহ, তাকে দয়া করুন ; আল্লাহ তাকে রহমতে ভূষিত করুন। তোমাদের সালাতের অপেক্ষাও সালাতের অংশ হিসেবে ধর্তব্য।[4]

মসজিদে এশা ও ফজরের সালাত আদায়ের রয়েছে প্রভূত সওয়াব ও ফজিলত। রাসূল সা. বিষয়টির গুরুত্ব ও পরোকালে এর মহান পুরস্কারের বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেছেন যে, যে ব্যক্তি এর ফজিলত বিষয়ে অবগতি লাভ করবে, শিশুর মত হামাগুড়ি দিয়ে হলেও সে তাতে অংশগ্রহণে সচেষ্ট হবে।

এশা ও ফজরের সালাত জামাতভুক্তিতে আদায়ের ফজিলত ও গুরুত্ব প্রমাণ করে ভিন্ন একটি হাদিস, যা উসমান বিন আফফান রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল সা.-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলছেন—

من صلي العشاء في جماعة فكأنما قام نصف الليل، ومن صلى الصبح في جماعة فكأنما صلى الليل كله. যে ব্যক্তি জামাতের সাথে এশার সালাত আদায় করল সে যেন অর্ধ রাত্রি এবাদতে কাটিয়ে দিল। আর যে ব্যক্তি ফজরের সালাত জামাতের সাথে আদায় করল সে যেন পুরো রাত্রিই সালাতে যাপন করল।[5]

ফজরের সালাত আদায়কারীর পুরস্কার বর্ণনা প্রসঙ্গে জুন্দুব বিন আব্দুল্লাহ রা. হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসূল সা. বলেছেন—

من صلي الصبح فهو في ذمة الله، فلا يطلبنكم الله من ذمته بشيء، فإنه من يطلبه من ذمته بشئ يدركه، ثم يكبه علي وجهه في نار جهنم.

যে ব্যক্তি ফজরের সালাত আদায় করল, সে আল্লাহর জিম্মায়। আল্লাহ যেন নিজের জিম্মা বিষয়ে তোমাদের থেকে কিছু তলব না করেন। কারণ, এ ব্যাপারে তিনি যার কাছ থেকে তলব করেন, তাকে তিনি পাকড়াও করেন, অত:পর জাহান্নামের আগুনের তাকে উপুর করে নিক্ষেপ করেন।[6]

ফজরের সালাত জামাতের সাথে আদায়ের ক্ষেত্রে যা ব্যক্তির জন্য সহায়ক :

  • সালাত আদায়ের জন্য ভোরে নিদ্রা হতে জাগরণের ব্যাপারে দৃঢ় প্রত্যয়।
  • এ ব্যাপারে সহায়তার জন্য সর্বদা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জ্ঞাপন।
    • রাতের প্রথম ভাগে দ্রুত নিদ্রায় গমন, যাতে শরীর উৎফুল্ল ও সতেজ থাকে।
    • ঘুমানো ও ঘুম হতে জাগরণকালীন দোয়া নিয়মিত আদায় করা।
    • সহায়ক অন্যান্য উপায় অবলম্বন| যেমন : এলার্ম ইত্যাদির সহায়তা গ্রহণ, যাতে সঠিক সময়ে নিদ্রা হতে জাগতে পারে।
    • শরয়ি বৈধ কোন কারণ ব্যতীত যে ব্যক্তি জামাতে এশা ও ফজরের সালাত আদায় বর্জন করল, সে নিজেকে ঠেলে দিল এক ভয়াবহ বিপদ ও পাপের মুখে। দলভুক্ত হল মুনাফিকদের। এ দু সালাত ত্যাগকারীদের ব্যাপারে রাসূল সা. ছিলেন অত্যন্ত ক্রোধান্বিত| তিনি ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন এদের ঘরবাড়িসহ জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার।
    • নিফাক খুবই মন্দ স্বভাব ও ভয়াবহ চারিত্রিক বিপদের কারণ। এমন কোন ব্যক্তি বা দল নেই, এ মন্দতায় আক্রান্ত হওয়ার পরও আল্লাহ যাদের ধ্বংস করেননি। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন—

إِنَّ الْمُنَافِقِينَ فِي الدَّرْكِ الْأَسْفَلِ مِنَ النَّارِ ‘নিশ্চয় মুনাফিকগণ জাহান্নামের সর্বনিম্নস্তরে অবস্থান করবে।’[7]

  • মুনাফিকদের দোষগুলো কী কী—নিম্নে সে ব্যাপারে কিছুটা আলোকপাত করা হবে—
  • অন্তরে কুফরকে স্থান দিলেও প্রকাশ্যে নিজেকে মুসলমান হিসেবে পরিচয় প্রদান করা।
  • এবাদত পালন খুব ভারী বোঝা মনে হওয়া—বিশেষত: এশা ও ফজর সালাতের ক্ষেত্রে। কারণ, এ সময় শয়তান ক্রমাগত মন্ত্রণা দেয় তা বর্জন করার জন্য। তা ছাড়া এশা হচ্ছে প্রশান্তি ও বিশ্রামের সময়, ফজরের সময়ে নিদ্রার স্বাদ অতুলনীয়।
  • মুনাফিকরা তাদের যে কোন ধর্মীয় কর্ম পালন করে প্রশংসা কুড়ানো ও লোকদেখানোর উদ্দেশ্যে। তারা যাকে উত্তম মনে করে তাকে আরো উত্তম হিসেবে লোকসমাজে প্রকাশের জন্য লালায়িত হয়। লোক-সমাবেশের স্থলে তারা হাজির হয়, সকলের সামনে নিজেকে প্রদর্শনীয় করে উত্থাপন করে। যখন কেউ দেখে না, তিরোহিত হয় বিন্দুমাত্র প্রশংসা প্রাপ্তির সম্ভাবনা—তখন তারা অন্তর্হিত হয়।
  • পার্থিব উপার্জনের জন্য তারা প্রবলভাবে হয়লালায়িত—যদিও তা হয় এবাদত পালনের মাধ্যমে। এক রেওয়ায়েতে এসেছে—

والذي نفسي بيده لو يعلم أحدهم أنه يجد عرقا سمينا أو مرماتين حسنتين لشهد العشاء. رواه البخاري ঐ সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ ! তাদের কেউ যদি জানত যে, মসজিদে এলে গোশত ভর্তি উটের হাড় পাওয়া যাবে, কিংবা পাওয়া যাবে বকরির ক্ষুর-দ্বয়ের মধ্যবর্তী উৎকৃষ্ট মাংস, তবে সে অবশ্যই এশার সালাতে উপস্থিত হত।[8]

  • কল্যাণ সাধনের তুলনায় অকল্যাণ রোধ প্রথমে আবশ্যক—শরিয়তের এ এক মৌলিক নীতি। রাসূল সা. তাদেরকে আগুনে পুড়িয়ে দেননি কেবল এ কারণেই যে, এর ফলে অসহায় নারী-শিশুরা আক্রান্ত হবে, যারা এ হুকুমের আওতাভুক্ত নয়।
  • ইসলাম—নি:সন্দেহে, মুসলমানদের জন্য প্রণীত একটি পূর্ণাঙ্গ মৌলিক পদ্ধতি, জীবনের প্রতিটি অনুসঙ্গে মুসলমানগণ যাকে আঁকড়ে ও লালন করে জীবনযাপন করবে।
  • এ পদ্ধতির সূচনাতেই যার অবস্থান, তা হচ্ছে এবাদত—যার মাধ্যমে বান্দা মাওলার নৈকট্যের পরম স্বাদ অনুভব করতে সক্ষম হয়। এ পদ্ধতির অন্যতম অংশ হচ্ছে দিবস ও রজনির সালাতগুলো সঠিক সময়ে, নিয়মবদ্ধরূপে জামাতের সাথে আদায় করা। শরয়ি কোন কারণ ব্যতীত তা বর্জনের দু:সাহস না করা।

সমাপ্ত


[১] বোখারি৬৫৭, মুসলিম-৬৫১
[২] মুসলিম-১০৪৪
[৩] মুসলিম-১০৪৫
[৪] মুসলিম-৬১১
[৫] মুসলিম- ৬৫৬
[৬] মুসলিম- ২৬১, তিরমিজি-৩৯৪৬
[৭] সূরা নিসা: আয়াত ১৪৫
[৮] বোখারি

আরও পড়ুন…

 

Salam-সঠিক ভাবে সালাম দেওয়া ও নেওয়ার নিয়ম ও পদ্ধতি

 

সালাম ইসলামের সৌন্দর্যময় একটি দিক। সালাম আদান প্রদানের ফলে শত্রু থেকে সখ্যে পরিণত হয়। দুই ব্যাক্তির মাঝে ভালবাসা ফয়দা হয়। চেনা পরিচিতদের মাঝে ভালবাসা বৃদ্ধি পায়। অচেনা মানুষকে আপন করে নেওয়া যায়। এই মনোহর রূপমাধুরী শুধুমাত্র ইসলামেই রয়েছে। যা অন্য কোন ধর্মে নেই।

জনৈক ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-কে জিজ্ঞেস করলেন— ইসলামে কোন্‌ জিনিসটি উত্তম? তিনি বললেন, তুমি খাদ্য খাওয়াবে ও চেনা অচেনা সকলকে সালাম দিবে। সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ১২

“সালাম” মানেই শান্তি কামনা করা। আমি খুব অবাক হয় মাদ্রাসার ছাত্রদের দেখে! তাদের মাঝে রয়েছে সালামের প্রচার-প্রসার। ছোট-বড় সবাইকে সালাম দেয়। ছোট-বড় কোন ভেদাভেদ নেই। অধুনা আমাদের সমাজে এর বড়ই অভাব।

আমি বড় বলে ছোটরা আমাকে সালাম দিবে। আমি বড়, আমি কেন ছোটদের সালাম দেব? আর একটু নাম করা ব্যাক্তিত্ব হলে তো কথায় নেই। না দিলে পিছনে গিয়ে শেকায়ত করে— অমুকের ছেলে বড় বিয়াদব। আমি পাশ দিয়ে আসতেছি দেখা সত্বেও সালাম দেয়নি।

রাসূল সা. এরকম ভেদাভেদ করতেন না। রাসূল (ﷺ) ছোট-বড় সবাইকে সালাম দিতেন। আমরাও এই অভ্যাসকে নিজেদের মাঝে ফিট্ করে নেওয়ার প্রয়াস চালাব-ইন শা আল্লাহ!

সালাম মানেই শান্তি। কোন মুসলমান ভাইকে দেখামাত্র বললাম, “আসসালামু আলাইকুম।” অর্থ হলো, “আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক।” সালামের উত্তরে বলল, “ওয়ালাইকুমুস সালাম”। অর্থ হলো, “আপনার উপরেও শান্তি বর্ষিত হোক।” এভাবে পরিচিত অপরিচিত সবার জন্য শান্তি কামনা করা একমাত্র ইসলামেই রয়েছে।

যে আগে সালাম দেয়, সে অহংকার মুক্ত হয়। কারণ, অহংকার ব্যাক্তিরা আগে সালাম দিতে লজ্জাবোধ করে। বরং তাঁরা অন্যের সালামের প্রতি মুখাপেক্ষী। আমি একজন নামকরা ব্যাক্তি। আমি কীভাবে দিনমজুরকে সালাম দিব? অহংকারীরা সর্বসাধারণ জনগণকে তুচ্ছ মনে করে। কিন্তু, ইসলাম এই ভেদাভেদকে দূরীভূত করতেই সালামকে প্রাধান্য দিয়েছে। হাদীসে আছে—

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন—মানুষের মধ্যে আল্লাহর নিকট সর্বাধিক উত্তম ঐ ব্যক্তি, যে আগে সালাম দেয়। সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫১৯৭

আল্লাহ তাআলা এরশাদ ফরমান—

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর যখন তোমাদের সালাম দেওয়া হবে, তখন তোমরা তার চেয়ে উত্তম সালাম দেবে অথবা জবাবে তাই দেবে।’ সুরা-৪ নিসা, আয়াত: ৮৬

তবে অধুনা আমাদের সমাজে কিছু কুসংস্কার এখনো রয়ে গেছে। যখন কোন মুসলমান ভাইয়ের সাথে দেখা হয়, সালাম দিয়ে মুসাফাহা করত। কিন্তু, এখন বলে হাত নাড়িয়ে হাই (hi)। অথচ তাঁর মাঝে কোন বরকত নেই। না আছে নেকি, না আছে বরকত!

আরেকটি কুসংস্কার হলো— মাথা নিছু করে পা ধরে সালাম করা। যেটি সম্পূর্ণ শরীয়তবহির্ভূত কাজ। একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা ছাড়া কারো কাছে মাথা নত করা সম্পূর্ণ হারাম। পা ধরে সালাম বিধর্মীদের সংস্কার, যেটি আঁকড়ে ধরছে মুসলমানরা।

ইসলামের মনোহারিত্ব নিয়ে লিখতে গেলে অনেক লিখা। তন্মধ্যে সালাম হলো ইসলামের সৌন্দর্যময় একটি দিক। সালাম নিয়ে সংক্ষিপ্ত আকারে উপস্থাপন করলাম।

সালামের সঠিক ও সুন্নতি পদ্ধতি কি?

 

আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল দাঈ: ইসলাম এক উন্নত সভ্যতা ও সংস্কৃতির প্রতিভূ। এর প্রতিটি কর্মই অত্যন্ত চমৎকার, পবিত্র ও কল্যাণকর। ইসলামি সম্ভাষণ রীতি হলো, এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ। একজন বিবেকবান ব্যক্তি যদি চিন্তা করে তাহলে তার কাছে প্রতিভাত হবে যে, ইসলামি সম্ভাষণ রীতি অন্য সকল ধর্মীয় ও প্রচলিত রীতিনীতি থেকে সুন্দর, অর্থবহ ও গাম্ভীর্যপূর্ণ।

এটি কেবল সম্ভাষণ নয় বরং রীতিমত একটি ইবাদত। অর্থাৎ এর মাধ্যমে আমরা নেকি অর্জন করতে পারি কিন্তু হাই-হ্যালো, আদাব, নমস্কার ইত্যাদি বিধর্মীদের সম্ভাষণ রীতিতে ইসলামি রীতির মদো তাৎপর্য, গাম্ভীর্য ও আবেদন কখনও খুঁজে পাওয়া যায় না। নিম্নে সালামের সঠিক পদ্ধতি এবং তার মমার্থ তুলে ধরা হলো:

সালামের সঠিক ও সুন্নতি পদ্ধতি:

সালামের শরিয়ত সম্মত তিনটি স্তর রয়েছে:

◍ ১) পূর্ণাঙ্গ ও সর্বোচ্চ স্তর হলো, এভাবে বলা: ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু’। [অর্থ: আপনার প্রতি শান্তি, আল্লাহর রহমত ও বরকত অবতীর্ণ হোক]
◍ ২) এর চেয়ে নিম্নস্তরের হলো, এভাবে বলা, “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ” [অর্থ: আপনার প্রতি শান্তি এবং আল্লাহর রহমত অবতীর্ণ হোক]।
◍ ৩) সবচেয়ে নিম্নস্তরের হলো: “আসসালামু আলাইকুম” [অর্থ: আপনার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক] বলা।
হাদিসে এসেছে যে,
عن عِمران بن الحصين رضي الله عنهما قَالَ: جاءَ رجُلٌ إِلَى النَّبيِّ ﷺ فَقَالَ: “السَّلامُ عَلَيكُم”، فَرَدَّ عَلَيْهِ، ثُمَّ جَلَسَ، فَقَالَ النبيُّ ﷺ: عَشْرٌ، ثُمَّ جَاءَ آخَرُ فَقَالَ: “السَّلامُ عَلَيكُم وَرَحْمَةُ اللهِ”، فَرَدَّ عليهِ، فَجَلَسَ، فَقَالَ: عِشْرون، ثُمَّ جَاءَ آخَرُ فَقَالَ: “السَّلامُ عَلَيكُم وَرَحْمَةُ الله وَبَرَكَاتُه”، فَرَدَّ عليهِ، فَجَلَسَ، فَقَالَ: ثَلاثُونَ. رواه أَبُو داود والترمذي وقال: حديثٌ حسنٌ.
ইমরান ইবনুল হুসাইন রা. হতে বর্ণিত, একজন ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে বলল, ‘আসসালামু আলাইকুম’। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আালইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে বসে ছিলেন। সাহাবিগণও তার সাথেই ছিলেন। তিনি সালামের উত্তর দিলেন। অতঃপর লোকটি বসলে তিনি বললেন, দশ। (অর্থাৎ তুমি ১০টি নেকি পেয়েছ।) এরপর আরেক ব্যক্তি এসে বলল, “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।”
তিনি সালামের উত্তর দিলেন। অতঃপর লোকটি বসলে তিনি বললেন, বিশ। (অর্থাৎ তুমি ২০টি নেকি পেয়েছ।) অতঃপর আরও এক ব্যক্তি এসে বলল, “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।” তিনি সালামের উত্তর দিলেন। অতঃপর লোকটি বসলে তিনি বললেন, ত্রিশ। (অর্থাৎ তুমি ৩০টি নেকি পেয়েছ) [আবু দাউদ, তিরমিযী- হাদিসটি হাসান।]
➧ ইমাম নওবি রহ. বলেন, ” اعلم أن الأفضل أن يقول المُسَلِّم : السَّلامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ ، فيأتي بضمير الجمع وإن كان المسلَّم عليه واحداً ، ويقولُ المجيب : وَعَلَيْكُمُ السَّلامُ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَركاتُه .
“জেনে রাখো, সালাম দাতার জন্য সবচেয়ে উত্তম হলো, “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু” বলা। বহু বচনের সর্বনাম ব্যবহার করবে যদিও যাকে উদ্দেশ্য করে সালাম দেয়া হচ্ছে সে একজন ব্যক্তি হয়। আর উত্তর দাতা বলবে, “ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।”
(আল আযকার, পৃষ্ঠা: ৩৫৬-৩৫৮) ❂ উল্লেখ্য যে, মাঝেমধ্যে ‘সালামুন আলাইকুম’, “সালামুন আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ”, সালামুন আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ” ইত্যাদি বাক্য দ্বারাও সালাম প্রদান করা জায়েজ আছে।
এ বাক্য দ্বারা ফেরেশতাগণ জান্নাতবাসীদেরকে সম্ভাষণ জানাবেন বলে কুরআনের একাধিক আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। দেখুন: সূরা যুমার/৭৩, সূরা নাহল/৩২। অনুরূপভাবে সূরা কাসাস এর ৫৫ নং এবং সূরা আনআমের ৫৪ নং আয়াতের মাধ্যমেও এ সব বাক্য দ্বারা সালাম দেয়ার বৈধতা প্রমাণিত হয়। তাছাড়াও এসব বাক্য দ্বারা আমাদের পারস্পারিক সালাম লেনদেন প্রসঙ্গে আলাদা সহিহ হাদিস বর্ণিত হয়েছে।
হাদিসটি হলো:
أنَّ رجُلًا مرَّ على رسولِ اللهِ صلَّى اللهُ عليه وسلَّم وهو في مجلسٍ فقال: سلامٌ عليكم فقال: ( عشرُ حسناتٍ ) ثمَّ مرَّ رجُلٌ آخَرُ فقال: سلامٌ عليكم ورحمةُ اللهِ فقال: ( عشرونَ حسنةً) فمرَّ رجُلٌ آخَرُ فقال: سلامٌ عليكم ورحمةُ اللهِ وبركاتُه فقال: ( ثلاثونَ حسنةً ) فقام رجُلٌ مِن المجلسِ ولم يُسلِّمْ فقال النَّبيُّ صلَّى اللهُ عليه وسلَّم: (ما أوشَك ما نسي صاحبُكم ! إذا جاء أحدُكم إلى المجلسِ فلْيُسلِّمْ فإنْ بدا له أنْ يجلِسَ فلْيجلِسْ فإنْ قام فلْيُسلِّمْ فليستِ الأُولى بأحقَّ مِن الآخِرةِ
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিল। তিনি তখন এক মজলিসে ছিলেন।
সে বলল, আসসালামু আলাইকুম (অর্থ: আপনার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (সালামের জবাব দিয়ে বললেন): “দশ নেকি।” অতঃপর অপর এক ব্যক্তি যাওয়ার সময় বলল: সালামুন আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ (অর্থ: আপনার/ প্রতি শান্তি ও আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক)।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “বিশ নেকি।” আরেক ব্যক্তি সেখান দিয়ে যাওয়ার সময় বলল: সালামুন আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ (অর্থ: আপনার উপর শান্তি, আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক)।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (সালামের জবাব দিয়ে বললেন) বললেন: “তিরিশ নেকি।” অতঃপর এক ব্যক্তি মজলিস থেকে উঠে চলে গেলো কিন্তু সালাম দিলো না।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনে, “হয়তো তোমাদের সাথী ভুলে গেছে। তোমাদের কেউ বৈঠকে এসে পৌছলে যেন সালাম দেয়। তারপর বৈঠকে বসার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলে বসবে। আবার সে যখন চলে যাবে তখনও যেন সালাম দেয়। কেননা পরের সালাম পূর্বের সালামের চেয়ে কম মর্যাদাপূর্ণ নয়।” (তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে হিব্বান, আহমাদ, আবু দাউদ-সহিহ)
❒ ‘স্লামালিকুম’ এর কি কোনও অর্থ আছে? এভাবে কি সালাম দেয়া যাবে?
উত্তর:’স্লামালিকুম’ মূলত: ‘আসসালামু আলাইকুম’ এর বিকৃত রূপ। আমাদের সমাজের ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞানহীন কতিপয় মানুষ বা তথাকথিত উচ্চ ডিগ্রীধারী শিক্ষিত মূর্খরা এভাবে বলে থাকে।
এর কোনও অর্থ নাই। তাই জেনেবুঝে ‘স্লামালিকুম’ এ বিকৃত শব্দ দ্বারা সালাম দেয়া বৈধ নয়। বরং আমাদের কতর্ব্য, সঠিক পদ্ধতি ও বিশুদ্ধ উচ্চারণে সালাম দেয়া। আল্লাহ তাওফিক দান করুন এবং। আমিন। লেখক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল, দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব

সম্মানিত ভাই ও বোনেরা, সালাম দেওয়া সুন্নত এবং উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। আমাদের অনেকেরই সালাম দিতে গিয়ে বা সালামের উত্তর দিতে গিয়ে অজান্তেই ভুল হয়ে যায়। যেমনঃ আমরা প্রতিদিন অনেককেই এভাবে সালাম দিতে শুনি যে, স্লামালাইকুম, আস সালামালাইকুম, সেলামালাইকুম, ইত্যাদি। আবার উত্তর দেয়ার সময়ও শোনা যায় ভুল শব্দের ব্যবহার।

যেমন, অলাইকুম সালাম, অলাইকুম আস-সালাম ইত্যাদি। সালাম একটি দুআ। ইসলামের শেআর ও প্রতিক পর্যায়ের একটি আমল। এর সহীহ উচ্চারণের প্রতি গুরুত্ব দেয়া জরুরি। কমপক্ষে এতটুকু বিশুদ্ধ উচ্চারণ অবশ্যই জরুরি, যার দ্বারা অর্থ ঠিক থাকে।

সালাম এর সঠিক উচ্চারণ হলো, السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি, ওয়া বার-কাতুহ্। وَعَلَيْكُمُ السَّلَامُ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ ‘ওয়া আলাইকুমুস-সালাম, ওয়া রহমাতুল্লাহি, ওয়া বার-কাতুহ্।

আরবী দেখে এর সহীহ উচ্চারণ শিখে নেয়া উচিত অন্যথায় কন্ঠ বাদ পড়ে যায়- ‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম’-এর স্থলে ‘অলাইকুম আস সালাম’ হয়ে যায়, যা স্পষ্ট ভুল। ইসলামে সালামের গুরুত্ব অপরিসীম। সালাম শান্তির প্রতীক। সালামে রয়েছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। সালাম এভাবে দিতে হয়, ‘আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।’ সালাম মুসলমানদের পরস্পরে ভালোবাসা, হৃদ্যতা সৃষ্টি করে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা ইমানদার না হওয়া পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, আর ইমানদার হতে পারবে না পরস্পরে ভালোবাসা না হলে। তোমাদের কি এমন একটি বিষয়ের কথা বলব, যা করলে তোমাদের পরস্পরে ভালোবাসা সৃষ্টি হবে? তোমরা পরস্পরের মধ্যে সালামের ব্যাপক প্রসার ঘটাও।’ (মুসলিম : ৫৪)

এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে প্রশ্ন করলেন, ইসলামের কোন কাজ সবচেয়ে ভালো? রাসুল (সা.) বললেন, ‘খাবার খাওয়ানো এবং পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে সালাম দেওয়া।’ (বোখারি : ১২)

সালামের প্রতিটি বাক্যে দশ নেকি। সালামে মোট তিনটি বাক্য আছে। সুতরাং যে পূর্ণ সালাম দেবে তার ত্রিশটি নেকি অর্জন হবে। একবার এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বলল, ‘আস্সালামু আলাইকুম’, রাসুল তার উত্তর দিলেন, তারপর সে বসল। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘দশ নেকি।’ অতঃপর অন্য এক ব্যক্তি এলো। সে বলল, ‘আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।’

রাসুল (সা.) উত্তর দিলেন। পরে ওই ব্যক্তি বসে পড়ল। রাসুল (সা.) বললেন, ‘বিশ নেকি।’ অতঃপর অন্য একজন এলো। সে বলল, ‘আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু।’ রাসুল (সা.) উত্তর দিলেন। সেও বসে পড়ল। রাসুল (সা.) বললেন, ‘ত্রিশ নেকি।’

(তিরমিজি : ২৬৮৯) সালামের বিধান ও তার পদ্ধতি : প্রথমে সালাম দেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত, উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। যদি সালামের দ্বারা কোনো দলকে উদ্দেশ্য করা হয়, তাহলে তার উত্তর দেওয়া ওয়াজিবে কেফায়া।

অর্থাৎ একজন উত্তর দিলে সবার পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে, তবে সবারই উত্তর দেওয়া উত্তম। উত্তর দেওয়ার সময় সালামের চেয়ে বাড়িয়ে উত্তর দেওয়া সুন্নাত। যেমন কেউ ‘আস্সালামু আলাইকুম’ বললে উত্তরে ‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ বলবে।

কেউ ‘আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ বললে উত্তরে ‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু’ বলবে। চিঠি বা মেসেজ ইত্যাদির শুরুতে সালাম দেওয়া সুন্নাত। এর মৌখিক বা লিখিত উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। (তিরমিজি ২/১০১)

সালামের আদবসমূহ : মানুষের মধ্যে সালামের ব্যাপক প্রসার ঘটানো প্রয়োজন, যাতে তা মুসলমানদের প্রতীকে পরিণত হয়। বিশেষ কোনো দলকে সালাম দেওয়া বা শুধু বড়দের দেওয়া কিংবা ছোটদের না দেওয়া উচিত নয়।

অনুরূপভাবে অপরিচিতকে বাদ দিয়ে শুধু পরিচিতকে সালাম দেওয়াও কাম্য নয়। (বুখারি : ১২) উত্তম হলো- ছোট বড়কে প্রথমে সালাম দেবে। পথচারী উপবিষ্টকে সালাম দেবে। আরোহণকারী পথচারীকে সালাম দেবে। কম লোক বেশি লোককে সালাম দেবে।

(বুখারি : ৬২৩১) উচ্চ স্বরে সালাম দেওয়া ও উত্তর দেওয়া সুন্নাত। কেননা সালাম উচ্চারণ করতে হয়। হাত বা মাথার ইশারা ইত্যাদি সালাম বলে বিবেচিত হবে না।

হ্যাঁ, দূরে হলে বা উত্তর শুনতে কোনো কিছু বাধা হলে মুখে উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে হাত বা মাথার ইশারায় উত্তর দেওয়ার কথা জানিয়ে দেবে। কাছে হলে সালামে হাত ওঠানো অপ্রয়োজনীয় ও সুন্নাতের খেলাফ। (তিরমিজি ২/৯৯)

সুন্নাত হলো দুজন আলাদা হওয়ার পর পুনরায় সাক্ষাৎ হলে আবার সালাম দেওয়া। সাহাবায়ে কেরাম যখন হাঁটতেন, তখন তাঁদের সামনে কোনো গাছ অথবা স্তূপ পড়ত, তাঁরা ডানে-বাঁয়ে আলাদা হয়ে যেতেন। অতঃপর আবার সাক্ষাৎ হলে একে অন্যকে সালাম দিতেন।

সালাম শুধু মুমিনদের অভিবাদন, কাফেরদের সালাম দেওয়া বৈধ নয়। হ্যাঁ, যদি এমন জায়গায় উপস্থিত হয় যেখানে কাফের-মুসলমান একত্রে থাকে, সেখানে সালাম দেওয়ার সময় মুসলমানের নিয়ত করবে। (সুনানে আবি দাউদ : ৫২০৫)

যদি কোনো অমুসলিম সালাম দেয় তাহলে তার জবাবে ‘আস্সালামু আলা মানিত্তাবাআল হুদা’ বলবে। (মুসনাদে আহমাদ : ২৪৩০৪) কিংবা ‘ওয়ালাইকা’ বা ওয়ালাইকুম’ বলবে। অমুসলিমদের বিশেষ প্রয়োজনে সালাম ছাড়া অন্য কোনোভাবে অভিবাদন জানানো বৈধ। যেমন শুভ সকাল বা শুভ রাত্রি ইত্যাদি।

তবে এমন বাক্য ব্যবহার করা যাবে না, যা অন্য ধর্মের জন্য নির্ধারিত। অন্যের মাধ্যমে কারো কাছে সালাম পৌঁছানোও সুন্নাত। যার কাছে সালাম পৌঁছানো হবে উত্তর দেওয়া তার দায়িত্ব। (তিরমিজি ২/৯৯) মাহরাম (যাদের দেখা বৈধ) নারীদের বা স্ত্রীদেরও সালাম দেওয়া সুন্নাত।

আর ফেতনা থেকে নিরাপদ হলে পরনারীদেরও সালাম দেওয়া জায়েজ। অনুরূপ নারীরাও পরপুরুষদের ফেতনার আশঙ্কা না হলে সালাম দিতে পারবে। (রদ্দুল মুহতার ৬/৩৬৯) কাউকে ঝুঁকে সালাম দেওয়া জায়েজ নেই। (তিরমিজি : ২৭২৮)

যেসব অবস্থায় সালাম দেওয়া মাকরুহ : যে ব্যক্তি সালামের উত্তর দিতে অক্ষম তাকে সালাম দেওয়া মাকরুহ। যথা : নামাজ, আজান-ইকামত, জিকির, তিলাওয়াত, ধর্মীয় জ্ঞানচর্চা, খানাপিনা ও ইস্তিঞ্জারত ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া, গুনাহের কাজে লিপ্ত ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া, স্ত্রী সহবাস ইত্যাদি অবস্থায় সালাম দেওয়া মাকরুহ। (রদ্দুল মুহতার ১/৪১৪) লেখক : ফতোয়া গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার

কিছু কিছু ক্ষেত্র সালাম দেয়া যাবে না

১. আযানরত, ইকামতরত কিংবা খুদবা পড়া অবস্থায় কোন ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া উচিত নয়।

২. যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে খেল-তামাশায় মগ্ন তাকে সালাম দেওয়া উচিত নয়।

৩. বার্থ রুম এ থাকা অবস্থায় সালাম দেওয়া উচিত নয়।

৪. অমুসলিমকে সালাম দেওয়া উচিত নয়। তাই আমরা আমাদের সমাজে, পরিবারে, অফিসে সালামের প্রচলন করব। সেই সাথে আমরা ইসলামকে মেনে চলব। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।

অমুসলিমকে সালাম দেওয়ার বিধান কী? এবং তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা কি জায়েজ?

অমুসলিমকে ‘সালাম’ দেওয়া বৈধ নয়। কোনো প্রয়োজনে দিতে হলে ‘আসসালামু আল মানিত্তাবাআল হুদা’ বলবে। আর অমুসলিমরা সালাম দিলে তদুত্তরে শুধু ‘ওয়া আলাইকুম’ বলবে। বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে মুসলিমদের ওপর অমুসলিমদের প্রাধান্য দেওয়া নিন্দনীয়।

তবে তাদের সঙ্গে যাবতীয় লেনদেন, সদাচরণ ও সাধারণ সম্পর্ক রাখা বৈধ। (সুরা মায়েদা, আয়াত : ৫১, সুরা আল ইমরান, আয়াত : ১১৮, আল বাহরুর রায়েক : ৮/৩৭৪, ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া : ১৯/৫৪৫, ফাতাওয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত : ১২/১০৩)

সালাম আদান-প্রদানে যে ১২ ভুল করা উচিত নয়

 

১. অশুদ্ধ উচ্চারণে সালাম দেওয়া: এটি মারাত্মক ভুল কাজ। আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ হচ্ছে পূর্ণ সালাম। শুধু আসসালামু আলাইকুম বললেও চলবে। তবে উচ্চারণে ভুল করা যাবে না।

২. ছোটদের প্রতি বড়দের সালাম না দেওয়া: এটিও ভুল প্রচলন। বড় বা বয়স্ক মানুষ ছোটদের সালাম দিতে কোনো বাধা নেই। যেমন- শিক্ষক ছাত্রদের এবং বাবা-মা সন্তানদের সালাম দেবেন। আগে সালামকারী বেশি সওয়াব ও মর্যাদার অধিকারী হয়ে থাকেন।

৩. অপরিচিত কাউকে সালাম না দেওয়া: পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে সালাম দেওয়ার নির্দেশ এসেছে। তাই পরিচিত ও মুখ চিনে সালাম দেওয়া গর্হিত ও নিন্দিত কাজ।

৪. সালাম দেওয়ার সময় মাথা ও বুক ঝুঁকে নিচু করা: সালাম দেওয়ার সময় মাথা ও বুক ঝুঁকে নিচু হয়ে সালাম দেওয়া নিষেধ। অনেকে পদস্থ বা বড় কোনো ব্যক্তিকে সালাম দেওয়ার সময় এমন করে থাকে। হাদিসে এ বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। এ থেকে বিরত থাকা বাঞ্ছনীয়।

৫. সালামের উত্তর দিয়ে আবার সালাম: আপনাকে কেউ সালাম দিল, আপনি উত্তর দেওয়ার পর ওই সালামকারীকে আবার সালাম দিলেন। অনেকে এ কাজটি অজ্ঞতাবশত করে থাকেন। উত্তম হলো, কারো সালামের অপেক্ষা না করে নিজেই আগে সালাম দেওয়া। কিন্তু কেউ আগে সালাম দিয়ে ফেললে তার সালামের উত্তর দেওয়াই নিয়ম। তাকে আবার সালাম দিতে হবে না।

৬. সালামের উত্তর না দিয়ে আবার সালাম: সালাম পাওয়ার পর উত্তর দেওয়াই বিধান। কিন্তু অনেকে সালাম দেওয়ার পর উত্তর না দিয়ে সালামদাতাকে আবার সালাম দেয়। এমনটি ঠিক নয়। দুজনের একজন সালাম দেবেন, অপরজন সালামের উত্তর দেবেন এটাই বিধান।

৭. সালাম দেওয়ার পর সালাম দিয়েছি বলা: কাউকে সালাম দেওয়ার পর সালাম না শুনলে বা উত্তর না-দিলে আমরা বলি, ‘আপনাকে সালাম দিয়েছি’। এভাবে বলা ঠিক নয়। তাকে আবার পূর্ণ সালাম দেওয়াই নিয়ম।

৮. কতক্ষণ বসার পর সালাম দেওয়া: সাক্ষাতের শুরুতেই সালাম দেওয়া সুন্নত। কতক্ষণ বসার পর সালাম করা অনুচিত।

৯. সালাম পাঠানোর পদ্ধতি: কারো কাছে সালাম পাঠানোর দরকার হলে আমরা বলি, অমুককে গিয়ে আমার সালাম দেবেন/বলবেন। এভাবে বলা ঠিক নয়। নিয়ম হল এভাবে বলা, অমুককে আমার পক্ষ থেকে আসসালামু আলাইকুম… বলবেন। তেমনি, সালাম পৌঁছানোর পরও ‘অমুকে আপনাকে সালাম দিয়েছেন’ এ রকম না বলে বলা উচিত, অমুক আপনাকে আসসালামু আলাইকুম… বলেছেন।

এক্ষেত্রে সালামের উত্তরদাতাও কেবল প্রেরককে উত্তর দেবেন না। বরং প্রেরক ও বাহক উভয়কে দোয়ায় শরিক করবেন। তিনি এভাবে উত্তর দেবেন, ওয়া আলাইকা ওয়া আলাইহিস সালাম।

১০. ফোনে বা সাক্ষাতে সালামের আগে হ্যালো বা অন্যকিছু বলা: ফোন বা মোবাইল ফোনে সালাম দেওয়ার আগে হ্যালো বা অন্য কোনো কথা বলা ঠিক নয়। আগে সালাম দিয়ে তারপর অন্য কথা বলবেন। হ্যালো বলার দরকার হলে সালাম দেওয়ার পর বলবেন। ফোন ছাড়া সাক্ষাতের বেলায়ও কথাবার্তার আগেই সালাম দেওয়াই সুন্নত। কেননা রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কথাবার্তা বলার আগে সালাম দিতে হয়। (তিরমিযি, হাদিস নং- ২৬৯৯)

১১. অনুষ্ঠান শেষে বা বিয়ের আকদ হওয়ার পর সালাম: অনেক জায়গায় দেখা গেছে, কোনো অনুষ্ঠান- বিশেষত দোয়া বা এ ধরনের কোনো মজলিস শেষ হওয়ার পর সালাম দেন অনেকে। এছাড়া বিয়ের আকদ হওয়ার পর বর উপস্থিত সবাইকে সালাম দেন।

বর সালাম না দিতে চাইলে বা ভুলে গেলে অন্যরা তাকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, সালাম দাও। না দিলে খারাপ এবং বেয়াদবি মনে করা হয়। এসব কুসংস্কার ও ভুল প্রচলন। সালাম হবে সাক্ষাতের সময়। সুতরাং কোনো অনুষ্ঠানে যাওয়ার পর কারো সঙ্গে দেখা হলে তাকে সালাম করবেন। কিন্তু অনুষ্ঠান শেষে সালামের প্রথা বর্জন করা উচিত।

১২. বক্তব্যে প্রথমেই সালাম দেওয়া: সাক্ষাতের শুরুতেই সালাম দিয়ে কথাবার্তা শুরু হবে- এটিই ইসলামের নিয়ম। কিন্তু আজকাল বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা যায়, বক্তা বিভিন্ন কথা বলার পর সালাম দেন।

যেমন তিনি বলেন, মঞ্চে উপবিষ্ট মান্যবর সভাপতি, অতিথিরা… সবাইকে আমার সালাম আসসালামু আলাইকুম। এভাবে সালাম বলা ইসলামী রীতির পরিপন্থি। শ্রোতা ও দর্শকদের মুখোমুখি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই  সালাম দেওয়া নিয়ম।-প্রিয়.কম লিখেছেন: মুফতি মুহিউদ্দীন কাসেমী, সম্পাদনা: সোহেলুর রহমান

অনেকেই সালাম দেওয়ার সময় দেখি কপালে হাত ঠেকান। এটা করা কি ঠিক?

উত্তর : সালাম দেওয়ার সময় হাত উঠানো বা কপালে ঠেকানো নিতান্তই অর্থহীন ব্যাপার। মুখে ‘আসসালামু আলাইকুম’ স্পষ্ট করে বলাই সালাম।

হাত উঠানো বা কপালে ঠেকানো দেশিয় রীতি, সুন্নত বা শরীয়তের বিধান নয়। এসব রীতি যথাসম্ভব বর্জনীয়। উত্তর দিয়েছেন : আল্লামা মুফতি উবায়দুর রহমান খান নদভী, সূত্র : জামেউল ফাতাওয়া, ইসলামী ফিক্হ ও ফাতওয়া বিশ্বকোষ। প্রশ্ন পাঠাতে নিচের ইমেইল ব্যবহার করুন। info@IslamiDawahCenter.com

আইডিসির সাথে যোগ দিয়ে উভয় জাহানের জন্য ভালো কিছু করুন!

আইডিসি এবং আইডিসি ফাউন্ডেশনের ব্যপারে  জানতে  লিংক০১ ও লিংক০২ ভিজিট করুন।

আইডিসি  মাদরাসার ব্যপারে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। 

আপনি আইডিসি  মাদরাসার একজন স্থায়ী সদস্য /পার্টনার হতে চাইলে এই লিংক দেখুন.

আইডিসি এতীমখানা ও গোরাবা ফান্ডে দান করে  দুনিয়া এবং আখিরাতে সফলতা অর্জন করুন।

কুরআন হাদিসের আলোকে বিভিন্ন কঠিন রোগের চিকিৎসা করাতেআইডিসি ‘র সাথে যোগাযোগ করুন।

ইসলামিক বিষয়ে জানতে এবং জানাতে এই গ্রুপে জয়েন করুন।