বাচ্চাদের রুকইয়ার সময় লক্ষণীয়
বাচ্চাদের জন্য রুকইয়াহ করা বড়দের রুকইয়াহ করার চেয়ে তুলনামূলকভাবে সহজ, আবার ফলাফল পাওয়া যায়ও তাড়াতাড়ি। বাচ্চাদের জন্য রুকইয়াহকে আমরা তিনটি ভাগে ভাগ করতে পারি-
১) বাচ্চার মধ্যে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণগুলো নিশ্চিতভাবে পাওয়া না যায়ঃ
যদি বাচ্চাদের ক্ষেত্রে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণগুলো নিশ্চিত হওয়া না যায় যেমন- “এমন কোন শারীরিক সমস্যা যেটা “দেখে মনে হয়” মেডিক্যালে এর কোন “ব্যাখা নেই” অথবা “মনে হচ্ছে” যে নজর লেগেছে অথবা বাচ্চারা তাদের স্বাভাবিক আচরণ করছে না” এক্ষেত্রে আমরা বাচ্চাদের জন্য “সার্বজনীন পূর্ণ রুকইয়াহ প্রোগ্রাম” বা দীর্ঘ মেয়াদি কোন রুকইয়ার পরামর্শ দিবো না। বরঞ্চ এই পর্যায়ে আমরা “বদনজরের সাধারণ রুকইয়া” অথবা “৭ দিনের ডিটক্স প্রোগ্রাম” করার পরামর্শ দিবো। বাচ্চার বয়স যদি এক বছরের নিচে হয় তাহলে ডিটক্স প্রোগ্রাম থেকে মধু বাদ দিবেন। ছোট বাচ্চা এক কাপ বা আধা গ্লাস পানি না খেতে পারলে সেটারও অর্ধেক খাওয়ান। আর তিলাওয়াত বাবা অথবা মা করে দিতে পারেন। ৭ দিনের ডিটক্স প্রোগ্রাম সাধারণত সব বয়সের মানুষের জন্যই উপযোগী।
২) বাচ্চার মধ্যে নিশ্চিতভাবে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণগুলো পাওয়া যাচ্ছে কিন্তু জ্বিনও হাজির হচ্ছে না এবং বাচ্চার খুব বেশি ইফেক্টও হচ্ছে নাঃ
যদি আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণগুলো নিশ্চিত হওয়া যায় কিন্তু বাচ্চা শক্ত কোন প্রতিক্রিয়াও না দেখায় আবার জ্বিন দ্বারা আসর নাও হয় তাহলে সেটা হতে পারে উপরে উল্লিখিত চিকিৎসা পদ্ধতি নেওয়ার কারণে (৭ দিনের ডিটক্স প্রোগ্রাম)। এক্ষেত্রে আমরা পরামর্শ দিবো সার্বজনীন রুকইয়াহ প্রোগ্রাম করার জন্য। কিন্তু রুকইয়াহ করতে হবে আরমাদায়ক ভাবে। অর্থাৎ বাচ্চাকে জোর করে মূর্তির মত এক জায়গায় বসিয়ে রাখা যাবে না, বাচ্চা ভয় পায় এমন কিছু করা যাবে না। আর এসব ক্ষেত্রে সাধারণত হিজামাও করার দরকার পরে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এত টুকুতেই বাচ্চা ভাল হয়ে যায়। এতে বাচ্চার কোন অসুবিধাও হয় না আবার জ্বিনের আসরের মত কিছুও ঘটে না।
৩) যদি সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে, যেমন বাচ্চা আক্রমণাত্মক হয়ে উঠে বা চিৎকার চেঁচামেচি করে, বাচ্চার ওপর জ্বিন হাজির হয়ে যায় বা আসর করে বসে তাহলে এক্ষেত্রে প্রতিদিন সরাসরি রুকইয়ার পাশাপাশি আমরা সার্বজনীন রুকইয়াহ প্রোগ্রাম অনুসরণ করার পরামর্শ দিবো। এক্ষেত্রে অভিজ্ঞ কাউকে দিয়ে প্রয়োজনে হিজামাহ করানো যেতে পারে। আর একটু খেয়াল রেখে (সতর্কভাবে) রুকইয়াহ করতে হবে। যেমন বাচ্চাকে কাছে বসিয়ে রাখতে হবে, রুকইয়াহ এর আয়াতগুলোতে বেশি বেশি জোর দিতে হবে।
বিশেষ জ্ঞাতব্যঃ
ক) বাচ্চার নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্য সবসময়ই সর্বোচ্চ গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করতে হবে। যেহেতু বাচ্চার আচরণ ও মানসিকতা পূর্ণবয়স্ক মানুষের মত নয়, তাই বাচ্চার সাথে পূর্ণবয়স্ক মানুষের মত আচরণ করা যাবে না। রুকইয়াহ করার সময় বাচ্চা যেন পরিপূর্ণ আরামদায়ক ও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। রুকইয়াহ করার সময় একটু পর পরে চেক করতে হবে, বাচ্চারা রিল্যাক্সড ও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে কিনা। তাদের সাথে হালকা খেলাধূলাও করতে পারেন, তাদেরকে বলতে পারেন “আমার সাথে সাথে পড়।” যদি আপনি বাচ্চার অপরিচিত কেউ হয়ে থাকেন, তাহলে রুকইয়াহ করার আগে ও পরে তার সাথে কিছু সময় কাটান। যেন সে আপনাকে সহজ ভাবে নিতে পারে।
খ) কখনোই, কখনোই বাচ্চাকে প্রহার বা আঘাত করবেন না। সত্যিকার অর্থে রুগী যেই হোক না কেন, বাচ্চা অথবা পূর্ণবয়স্ক, তাকে প্রহার করা সাধারণত ভালো রেজাল্ট দেয় না। বরং এর কারণে অনেক সময় জ্বিন আরো দীর্ঘ সময় শরীরে ঘাপটি মেরে বসে থাকতে পারে। আর বাচ্চার গায়ে আঘাত করা হলে, বাচ্চা সিরিয়াস ইনজুরিতে পড়ে যেতে পারে। অনেকক্ষেত্রে রুকইয়াহ চলাকালীন সময়ে “জ্বিনকে” প্রহার করার কারণে বাচ্চা মারাও যায়। তাই প্রহার করা এক্ষেত্রে জ্বিনকে সাহায্য করারই নামান্তর।
যদি বুঝতে পারেন জ্বিন শরীরের এখানে সেখানে ছুটোছুটি করছে, তাহলে মৃদুভাবে সেই জায়গায় মালিশ করবেন। ফলে বাচ্চাও আরাম বোধ করবে আর জ্বিনও প্রেশারে থাকবে।
গ) বাচ্চাদের রুকইয়াহ করার সবচেয়ে জটিল বিষয় হচ্ছে, বাচ্চারা বড়দের মত তাদের অনুভূতি আর অভিজ্ঞতাগুলো শেয়ার করতে পারে না। স্বভাবগত ভাবেই বাচ্চারা একটু ছুটোছুটি বা দৌড়াদৌড়ি পছন্দ করে। এটাকে জ্বিনের লক্ষণের সাথে গুলিয়ে ফেললে হবে না। সময় নিয়ে বাচ্চার আচরণ পর্যবেক্ষণ করতে হবে; বিশেষ করে রুকইয়াহ করার সময় ও রুকইয়াহ করার আগে বা পরের সময়ের আচরণে পার্থক্য ভালো করে খেয়াল করতে হবে। তাহলে আপনি বাচ্চার স্বাভাবিক আচরণ আর অস্বাভাবিক আচরণের মাঝে পার্থক্য ধরতে পারবেন।
ঘ) যদি বাচ্চা বয়সে একটু বড় হয়, নিজের কথা বুঝিয়ে বলতে পারে; তাহলে বাচ্চার সাথে তার সমস্যা নিয়ে আলোচনা করুন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, তার মন থেকে শয়ত্বান জ্বিনের ভয় দূর করতে হবে। বাচ্চাদের মনে বড়দের তুলনায় শয়ত্বান জ্বিনের ভয় বেশি প্রভাব ফেলে। এমন যেন না হয়, জ্বিনের ভয়ে বাচ্চা ঘুমাতেই পারছে না। বাচ্চার কাছে শয়ত্বান জ্বিনের দূর্বলতাগুলো তুলে ধরবেন। তাদেরকে বুঝান শয়ত্বান জ্বিন কিভাবে কুর’আনের ভয়ে পালিয়ে বেড়ায়। বাচ্চাদেরকে শয়ত্বান জ্বিন থেকে সুরক্ষার জন্য মাসনূন দু’আ গুলো শিখিয়ে দিন।
ঙ) যদি জ্বিন হাজির হয়েই যায় এবং কথাও বলা শুরু করে, তাহলে জ্বিনের সাথে অপ্রয়োজনীয় ও বেশি কথা বার্তা বলবেন না। জ্বিনকে “ইসলাম গ্রহণ করে বাচ্চার শরীর থেকে বের” হয়ে যেতে বলবেন। আর যদি “ইসলাম” গ্রহণ করতে না চায়, তাহলে বলবেন যেন “চলে যায় এবং আর ফিরে না আসে।” জ্বিনের কোন গাল-গল্পই বিশ্বাস করবেন না, তাদের সাথে কোন বোঝাপড়াতেও যাবেন না।
চ) রুকইয়াহ করার জন্য নির্দিষ্ট কোন সময় ধরাবাঁধা নেই। কিন্তু আপনি যদি দেখেন কোন নির্দিষ্ট সময়ে বাচ্চার মধ্যে লক্ষণগুলো প্রকট হয় (যেমনঃ মাগরিবের পর), তাহলে সে সময়ে রুকইয়াহ করাটাই সবচেয়ে ভালো। অন্যথায় যে সময় বাচ্চা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে, সে সময়ই রুকইয়াহ করবেন।
ছ) অবস্থা বুঝে রুকইয়াহ করার পদ্ধতি ও সময় পরিবর্তন করতে পারেন। তবে খুব দ্রুত রুকইয়াহর পদ্ধতি পরিবর্তন করবেন না, কারণ এতে জ্বিন শয়তান আপনাকে নিয়ে খেলা করার বা ম্যানুপুলেট করার সুযোগ পাবে।
আল্লাহই ভালো জানেন।
Related
Related Posts
Leave a Reply Cancel reply
Categories
- Ahle Hadis
- Bangladesh
- Death
- Do in Danger
- Dowry
- Dua
- Fasting
- Gazwatul Hind
- Hadith
- Humble
- Husband & Wife
- Iman
- Introduction to Allah
- Islamic Days
- Islamic Economi
- Islamic Education
- Islamic FAQ
- Islamic Future
- Islamic History
- Islamic Lectures
- Islamic Life
- Islamic Rules
- islamic song
- Jihad
- Jinn
- Magic
- Marriage
- Motivation
- Muhammad SM
- Muslims
- Parenting
- Patriotism
- Pending
- Personal Development
- Pornography
- Quran
- Ruqyah
- Safety
- Salah
- Sin
- Tajweed
- Veil
- weed
- Zakat
Recent Posts
- সঠিক ভাবে সালাম দেওয়া ও নেওয়ার নিয়ম ও পদ্ধতি October 25, 2020
- রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে ইসলামের দিক-নির্দেশনা August 14, 2020
- সূরা জিন ও সূরা জিনের ফযিলত! May 23, 2020
- ঈদের সালাত ঘরে আদায় করা যাবে কিনা ও ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম? May 18, 2020
- Last 10 days of Ramadan May 17, 2020