রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে ইসলামের দিক-নির্দেশনা
রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে ইসলামের দিক-নির্দেশনা
রাগ মানবিক আবেগের অংশ বিশেষ, তবে অনিয়ন্ত্রিত রাগ মারাত্মক ক্ষতিকারক। জ্ঞানীরা বলেন, রাগ হলো বারুদের গুদামের মতো, আগুনের স্ফূলিঙ্গের ছোয়ায় সব কিছু ধ্বংস করে দিতে পারে এই রাগ, এই কারণে রাগ নিয়ন্ত্রণের কোনো বিকল্প নেই।
আরেক ধরনের লোক হলো এরকম যে, তারা ভারসাম্যপূর্ণ, বিবেক ও নৈতিক শিক্ষার ভিত্তিতে যৌক্তিক পন্থায় নিজেদের ক্রোধ নিয়ন্ত্রণে রাখে, এ ধরনের ব্যক্তিরা সাধারণত সাহসী ও আশাবাদী হয়।
সাধারণত কোনো কারণ ছাড়া মানুষ রাগান্বিত হয় না, এর মধ্যে কোনো কোনো কারণ গ্রহণযোগ্য, আবার কোনো কোনোটি অগ্রহণযোগ্য ও অযৌক্তিক।
ইসলাম মানুষকে রাগ নিয়ন্ত্রণ করার নির্দেশ দিয়েছে, ইসলাম মনে করে, রাগ মানুষকে জ্ঞান, বিবেক ও ধর্মের পথ থেকে বিচ্যুত করে দেয়, রাগের কারণে মানুষের আচার-আচরণ ও চিন্তায়া খারাপ প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। তাই রাগান্বিত অবস্থায় ক্ষমা করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে ইসলাম। বিশেষ করে কোনো ব্যক্তি যদি প্রতিশোধ নেওয়ার ক্ষমতা থাকার পরও প্রতিশোধ না নেয় এবং ক্ষমা করে দেয়, তাহলে তার এ কাজটি ইসলামের দৃষ্টিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত।
ইসলামের ইতিহাসে দেখা যায়, বড়া বড় মনিষীরা ক্ষমা করার ক্ষেত্রে ছিলেন অগ্রগামী, তারা রাগান্বিত হলে সূরা আল ইমরানের ১৩৪ নম্বর আয়াতটি তেলাওয়াত করতেন। এ আয়াতে বলা হয়েছে, ‘যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল সব অবস্থায়ই অর্থ-সম্পদ ব্যয় করে এবং যারা ক্রোধ দমন করে ও অন্যের দোষ-ক্রটি মাফ করে দেয়। এ ধরনের সৎলোকদের আল্লাহ অত্যন্ত ভালোবাসেন।
মহান ও আধ্যাত্মিকভাবে পরিশুদ্ধ ব্যক্তিরা সব সময় অন্যের জন্য দোয়া করেন, মানুষকে সংশোধন করে দেওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে আবেদন জানান, তাদের কথা হলো, কোনো আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধু-বান্ধব আপনার ওপর রেগে থাকলে ক্ষুব্ধ লোকটির কাছে গিয়ে নম্রভাবে তাকে স্বান্তনা দিন, তার ক্ষোভ উপশমের ব্যবস্থা করুন, যাতে সে শান্ত হয়, এমনটি করলে ক্ষুব্ধ ব্যক্তিটির ক্ষোভ কমবে, তার কোনো ক্ষতি করার পরিকল্পনা থাকলে তা থেকে সরে আসবে।
রাগ নিয়ে ইসলামের এমন অবস্থানের পরও কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে ক্ষোভকে সঠিক বলে রায় দিয়েছে, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, জুলুম ও বৈষম্য দূর করা এবং মানুষের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য অপরাধী ও জুলুমবাজদের মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে রাগ বৈধ। জাতীয়, ধর্মীয় ও মানবিক আদর্শ ও মূল্যবোধ রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনে রাগকে কাজে লাগাতে হবে, তবে অন্যায় দমন করতে যেয়ে অন্যায়কে যাতে প্রশ্রয় না দেওয়া না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
বস্তুত রাগ মানুষের জীবনকে সহজেই বিষাক্ত করে তুলতে পারে, রাগের মাথায় এমন সব কাজ ঘটে যাতে পারে- যা ব্যক্তি, সমাজ তথা গোটা বিশ্বের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ, তাই রাগ হলে আলেমরা ‘আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম’ পড়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
রাগকে নিয়ন্ত্রণ করার সাধারণ ১০ টি উপায়!
চলুন জেনে নেওয়া যাক কিভাবে রাগকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়–
১। 3 Seconds Rule: Scientific research থেকে দেখা গেছে, short temper হওয়ার কারণে যে সেনসেশন হয় সেটা সাধারণত ২.৫ সেকেন্ড স্থায়ী থাকে। অর্থাৎ রাগ বেরিয়ে আসার আগে আমরা যে অসহ্যকর অনুভূতি অনুভব করি সেটা স্থায়ী হয় ২.৫ সেকেন্ড, এই সময়ের মধ্যে রাগ প্রকাশ করে ফেললে তা বারবার Re-generate হতে থাকে, রাগ আরও বাড়তে থাকে। কিন্তু যদি কোনোরকম রিয়্যাক্ট না করে ২.৫ সেকেন্ড কাটিয়ে দিতে পারি, তাহলে সেই সেনসেশনটা নষ্ট হয়ে যায় এবং আমরা নিজেদের উপর আবার নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাই। তাই এইহ্মেত্রে আমরা 3 seconds rule অনুসরণ করতে পারি।
এইজন্য আপনি নিজের খুশি মতো যে কোন উপায় ব্যবহার করতে পারেন। যেমন: বসে থাকলে দাঁড়িয়ে যাবেন, চোখ বন্ধ করে ইতিবাচক চিন্তা করুন। মোট কথা ৩ সেকেন্ড কোন রকম রিয়্যাক্ট না করে পার করে দিতে হবে, এতে আপনার রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করবে।
২। ব্যায়াম করুন: প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই ব্যায়াম করুন। Exercise বা ব্যায়াম অনেক বেশি উপকারী। নিয়মিত ব্যায়ামের ফলে আপনার ব্রেনে অক্সিজেন বেড়ে যায়, এনার্জি লেভেল বেড়ে যায়। দেখবেন কিছু দিনের মধ্যেই আপনার আচরণে পরিবর্তন আসবে এবং আপনি রাগ কমাতে পারবেন।
৩। গভীরভাবে শ্বাস নিন: যখনই বুঝতে পারবেন যে আপনার রাগ হচ্ছে তাহলে গভীরভাবে শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করুন। আস্তে আস্তে দম ছাড়ুন। এতে কিছুক্ষণের জন্য হলেও মন অন্যদিকে সরে যাবে। আর গভীর শ্বাস তাৎক্ষণিকভাবে আপনার মাথায় অক্সিজেনের প্রবাহ বাড়াবে, মাথায় রক্ত চলাচল হবে। ফলে আপনি একটু স্থিরবোধ করবেন। এতে করে আপনার রাগটাও কমে যাবে।
৪। বুঝিয়ে বলুন: আপনার ঘরে কেউ নক না করে ঢুকে পরলে আপনার রাগ হয়। মনে হয়, এখনই ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বের করে দেই। তাহলে রাগ না করে বুঝিয়ে বলুন, দেখুন সে কি বলে। হতে পারে সে আপনার অপছন্দের ব্যাপারটা জানেই না। আপনি চাইলে বিষয়টি দরজায় লিখে রাখতে পারেন। এতে আপনারও রাগ হবে না, এবং সবার বুঝতেও সুবিধা হবে।
৫। হেঁটে আসুন: রেগে গিয়ে চিৎকার না করে যার উপর রাগ হয়েছে তার সামনে থেকে সরে যান। রাগারাগিতে কোনো পক্ষেরই লাভ হয় না। রাগ সামলাতে না পারলে অল্প সময়ের জন্য হলেও ঘটনাস্থল ত্যাগ করুন। একটু হেঁটে আসুন। এতে রাগ বাড়ার সুযোগই তৈরি হবে না এবং আপনার মনও হয়তো একটু শান্ত হওয়ার সুযোগ পাবে।
৬। মেডিটেশন: একাগ্র মনের কোন চিন্তার নাম meditation। এটি শুধু মনকেই কেন্দ্রীভূত করে জাগিয়ে তোলে না, শরীর যন্ত্রেরও উপকার করে। আর সত্যিকথা বলতে কি, মানুষের শক্তির উৎস হলো মন। মন যখন শান্ত থাকে মানুষ তার মস্তিষ্ককে সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারে। আর মনকে স্থির করার সফলতম পদ্ধতি হলো মেডিটেশন(meditation)। নিয়মিত একটু সময়ের জন্য মেডিটেশন বা ধ্যান করার চর্চা করুন। ধ্যানচর্চায় অভ্যস্ত হলে আপনি কাউকে কিচ্ছু বুঝতে না দিয়েই যেকোনো সময় নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। কিছুদিন পরই খেয়াল করবেন আপনার রাগ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আছে।
৭। স্থির থাকুন: মানসিক অস্থিরতা অতিরিক্ত রাগের একটি কারণ। আমরা যখন স্থির থাকতে পারি না তখন যেকোনো বিষয় নিয়েই আমরা রেগে যাই। কেননা মানসিক অস্থিরতার কারণে সব কিছু আমাদের ভুল মনে হয়।যার ফলে আমরা রেগে যাই। তাই স্থির থাকা খুব প্রয়োজন। আপনি যদি মানসিকভাবে স্থির থাকেন তাহলে মানসিক ভারসাম্যের বিপর্যয় ঘটবে না। ফলে আপনার রাগ কমে যাবে।
৮। ক্ষমা করতে শিখুন: মানুষ ভুল করবেই এটাই স্বাভাবিক। কোনো মানুষই ১০০% সঠিক কোনো নয়। তাই কারো ভুলের জন্য রেগে যাওয়াটা মোটেও কোন বুদ্ধিমানের কাজ না। রেগে গিয়ে তার ভুল কি ঠিক করতে পারবেন? না। তাহলে ভাবুন যা হওয়ার হয়ে গেছে রাগ না করে ক্ষমা করে দিন , এতে করে পরবর্তীতে আপনার নিজেরই ভালো লাগবে।
৯। চিন্তা করুন: রেগে গেলে আপনি হাতের কাছে যা পান তাই ছুঁড়ে ফেলে দেন। হোক তা আপনার মোবাইল অথবা কাচের গ্লাস। তবে ছুঁড়ে ফেলার আগে একবার চিন্তা করে দেখুন তো, মোবাইলটা ভেঙে গেলে হ্মতিটা কার হবে ? আপনারই। তাই রাগান্বিত হলেও সব সময় সক্রিয় মস্তিস্ক দিয়ে চিন্তা করুন।
১০। সমাধান করুন: অনেকেই বলছেন, ‘রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন’। কিন্তু ব্যাপারটা তো আসলে কেবল হার–জিতের নয়। রাগের মাথায় আমরা অনেক কথাই বলি, অনেক কিছুই করে ফেলি। মুশকিলটা এখানেই।পৃথিবীতে কারণ ছাড়া কোন কিছু ঘটে না। সমস্যা থাকলে তার সমাধানও থাকবে। তেমনি আপনার রাগ হওয়ার কারণ থাকলে অবশ্যই তার সমাধানও আছে। তাই সমাধান খুঁজে বের করে অতিরিক্ত রাগ পরিহার করুন।
আপনি বা আমি কেউই বেশি দিন এই পৃথিবীতে নেই। তাই ক্ষণিকের এই যাত্রায় রেগে গিয়ে সময় নষ্ট করে লাভ কি বলুন? তাই দেরি না করে আজ থেকেই উপায়গুলো কাজে লাগান, কিছুদিন পর নিজেই বুঝতে পারবেন পরিবর্তনটা।
আইডিসির সাথে যোগ দিয়ে উভয় জাহানের জন্য ভালো কিছু করুন।
আইডিসি এবং আইডিসি ফাউন্ডেশনের ব্যপারে বিস্তারিত জানতে লিংক০১ ও লিংক০২ ভিজিট করুন।
আইডিসি মাদরাসার ব্যপারে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
আপনি আইডিসি মাদরাসার একজন স্থায়ী সদস্য /পার্টনার হতে চাইলে এই লিংক দেখুন.
আইডিসি এতীমখানা ও গোরাবা ফান্ডে দান করে দুনিয়া এবং আখিরাতে সফলতা অর্জন করুন।
কুরআন হাদিসের আলোকে বিভিন্ন কঠিন রোগের চিকিৎসা করাতেআইডিসি ‘র সাথে যোগাযোগ করুন।
ইসলামিক বিষয়ে জানতে এবং জানাতে এই গ্রুপে জয়েন করুন।
Related
Related Posts
Leave a Reply Cancel reply
Categories
- Ahle Hadis
- Bangladesh
- Death
- Do in Danger
- Dowry
- Dua
- Fasting
- Gazwatul Hind
- Hadith
- Humble
- Husband & Wife
- Iman
- Introduction to Allah
- Islamic Days
- Islamic Economi
- Islamic Education
- Islamic FAQ
- Islamic Future
- Islamic History
- Islamic Lectures
- Islamic Life
- Islamic Rules
- islamic song
- Jihad
- Jinn
- Magic
- Marriage
- Motivation
- Muhammad SM
- Muslims
- Parenting
- Patriotism
- Pending
- Personal Development
- Pornography
- Quran
- Ruqyah
- Safety
- Salah
- Sin
- Tajweed
- Veil
- weed
- Zakat
Recent Posts
- সঠিক ভাবে সালাম দেওয়া ও নেওয়ার নিয়ম ও পদ্ধতি October 25, 2020
- রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে ইসলামের দিক-নির্দেশনা August 14, 2020
- সূরা জিন ও সূরা জিনের ফযিলত! May 23, 2020
- ঈদের সালাত ঘরে আদায় করা যাবে কিনা ও ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম? May 18, 2020
- Last 10 days of Ramadan May 17, 2020